ঢাকা | নভেম্বর ২৩, ২০২৪ - ১:০৭ পূর্বাহ্ন

কাপ্তাইয়ে প্রতিদিন নিজেরাই নৌকা চালিয়ে বিদ্যালয়ে যায় শিক্ষার্থীরা

  • আপডেট: Sunday, February 11, 2024 - 11:43 am
ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই ( রাঙামাটি)  প্রতিনিধি: রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৩ নং চিৎমরম ইউনিয়ন এর  ৬ নং ওয়ার্ডের দূর্গম কলাবুনিয়া মারমা পাড়ার মেয়ে পূর্নিমা মারমা ও মাসিনু মারমা। তাঁরা কাপ্তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন এলাকায় অবস্থিত শহীদ শামসুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। একই পাড়ার মেয়ে সুইক্রাপ্রু মারমা এই বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেনীতে পড়ে। আর হ্লাক্রইচিং মারমা ও উক্রাক্রো মারমা এই বিদ্যালয়ে পড়ে নবম শ্রেণীতে।
তবে তাদের স্কুলের আসার পথটা মোটেই সহজ নয়। কারন এই কলাবুনিয়া পাড়া হতে প্রথমে কর্ণফুলি নদী পার হয়ে কাপ্তাই চৌধুরী ছড়া ফরেস্ট ঘাট নেমে অত:পর প্রায় ১ কি: মি: সড়ক পথ হেঁটে তবেই স্কুলে পৌঁছাতে হয়। এই সড়ক পথে স্কুলে যেতে তাদের সহজতর হলেও সবচেয়ে কষ্টকর হয় এই নৌপথ। এই পাড়ার কোন প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক না থাকায় স্কুল পড়ুয়া  শিক্ষার্থীরা কাপ্তাইয়ের আশেপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। তাঁরা সকলেই নিজেরা বৈঠা হাতে নৌকা চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে  এই কর্ণফুলী নদী পাড় হয়ে এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায়।
রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯ টায় কাপ্তাই বিদ্যুৎ এলাকার চৌধুরীছড়া ফরেস্ট ঘাট এলাকা গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের ড্রেস পরিহিত শিক্ষার্থীরা নিজেরা বৈঠা হাতে নৌকা চালিয়ে এই ঘাটে ভিড়ছেন।
এসময় পুর্নিমা মারমা ও মাসিনু মারমা নামে দুই শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়। তাঁরা বলেন, আমরা কাপ্তাই শহীদ শামসুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীতে পড়ি। স্কুল খোলাকালিন সময়ে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮ টায় আমরা কলাবুনিয়া পাড়া হতে বের হই। এরপর ছোট নৌকা করে নিজেরে বৈঠা টেনে আধা ঘন্টা নৌ পথ পাড়ি দিয়ে এবং ১ কি: মি: সড়ক পথে  স্কুলে আসি। বর্ষা কালে যেদিন অতিবৃষ্টি হয়, সেদিন আমাদের পাড়ার কেউ স্কুলে আসতে পারে না। কারন ছাদ ছাড়া নৌকায় আমরা ভিজে যায়। আবার শুষ্ক মৌসুমে আরোও একটা সমস্যা হয়, সেটা হলো এই নদীর মাঝখানে পানি শুকিয়ে গিয়ে চর জেগে উঠে। তাই আমরা স্কুলে আসতে পারি না, ফলে  আমাদের পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটে।
এইসময় শিক্ষার্থী হ্লাক্রইচিং মারমা ও উক্রাক্রো মারমা বলেন, যখন নদীতে জোয়ার থাকে তখন নৌকা চালাতে সহজ হয়, আবার ভাটা পড়ে গেলে নদীর কিনারে এসে অপেক্ষা করি কখন জোয়ার আসবে।
তাঁরা সকলেই একটি ছাঁদওয়ালা বোটের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের প্রতি সু- দৃষ্টি কামনা করেন। সেই সাথে কর্ণফুলী নদী যাতে ড্রেজিং করে নাব্যতা  সংকট দূর হয় সেই দাবিও জানান।
৩ নং চিৎমরম ইউনিয়ন এর ৬ নং ওয়ার্ডের কলাবুনিয়া পাড়ার ইউপি সদস্য
অংখেস মারমা বলেন,  আমাদের এই পাড়ায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। ছেলেমেয়েরা চিৎমরম এবং  কাপ্তাই ইউনিয়ন এর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। একমাত্র নৌ পথ দিয়ে ছোট নৌকা করে তাঁরা কাপ্তাই  ইউনিয়ন এর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে যায়। তবে কর্ণফুলী নদীতে তাঁরা নিজেরাই বৈঠা বেয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে আসা যাওয়া করে। তাদের জন্য বড় বোট থাকলে সকলে একসাথে স্কুলে যেতে পারতো।
কাপ্তাই শহীদ শামসুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: হানিফ এবং কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুব হাসান বাবু বলেন, এই কলাবুনিয়া পাড়া হতে অনেক শিক্ষার্থী আমাদের বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে থাকেন। যেদিন প্রাকৃতিক দূর্যোগ হয়,সেদিন তারা স্কুল আসতে পারে না। কারন কর্ণফুলী নদী পাড় হয়ে তাদের স্কুলে আসা সত্যিই দূরহ ব্যাপার।