কাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহারসহ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টা
জাগো জনতা অনলাইন।। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, জুম চাষে আগুন লাগলে যেমন এর আশেপাশের সবকিছুই পুড়ে ছাড়খার হয়ে যায়- ঠিক তেমনি আপনাদের দায়িত্বে অবহেলা থাকলে আপনারাও ছাড়খার হয়ে যাবেন। তিনি বলেন, কাজের প্রতি অবহেলা চলবে না। ফাইল চালাচালির দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করতে হবে। একইসাথে কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য স্বল্প মেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে দিনব্যাপী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আরও বলেন, জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্গানোগ্রাম ঠিক করতে হবে। তিন পার্বত্য জেলায় নিয়োগ কমিটি পুনর্গঠন সরকারের বিধি বিধান অনুযায়ী হতে হবে। তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিধি-বিধান অনুযায়ী সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। উপদেষ্টা বলেন, কাজের রিপোর্ট দ্রুত উপস্থাপন এবং মনিটরিং ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করতে হবে। তিনি সরকারের অর্থ অযাচিত ব্যয় থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি অর্থ ছাড়ের বিষয়ে যাচাই বাছাই করে প্রকৃত খরচ ছাড়ের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আরও বলেন, তিন পার্বত্য অঞ্চলে পানির অভাব যাতে না হয় সেজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। জনকল্যাণে উপকারভোগীর সংখ্যা নির্ণয় করাসহ গৃহীত স্কিমগুলোর যাবতীয় বিষয়াদি সিভিল প্রকৌশলীগণ মনিটরিং করবেন বলে উপদেষ্টা জানান। উপদেষ্টা বলেন, সকলের সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতেই আমরা সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবো।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী বলেন, জনকল্যাণে গৃহীত পূর্বের প্রকল্প/স্কিমগুলোর সর্বশেষ অবস্থা কোন অবস্থায় রয়েছে তা জেনে অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে। তিনি বলেন, অসহায় গরিব বানভাসি ক্ষুধার্ত মানুষদের খাবার বিতরণের কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, তিন জেলায় আর্থিক সহায়তা ও বিতরণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সিইও’রা ব্যবস্থা নিবেন।
কর্মশালায় রাঙ্গামাটি লেক এলাকায় মাছের অভয়ারণ্য গড়ে তোলা ও পাহাড় কাটা বন্ধ করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিদ্যমান প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন এবং নতুন প্রকল্প গ্রহণ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। কর্মশালায় কৃষিক্ষেত্রে শস্য বহুমুখীকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সঠিক প্রকল্প গ্রহণ; আধুনিক কৃষি মার্কেটিং এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা; পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার জন্য আমব্রেলা প্রজেক্ট/মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের জন্য নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ডিপিপি নির্ণয় করা; ন্যাস্ত বিভাগসমূহের কর্মকর্তা ও জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করা; তিন পার্বত্য জেলায় সরকারি নিয়োগ কমিটি পুনর্গঠন করার বিষয়; পার্বত্য তিন জেলায় টিআর ও জিআর স্কিম গ্রহণে ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা; টিআর ও জিআর এর ক্ষেত্রে একাউন্ট পে-চেক ও জয়েন্ট সিগনেচার সিস্টেম চালু করা; প্রথম বরাদ্দের মাস্টাররোল প্রাপ্তি সাপেক্ষে দ্বিতীয় বরাদ্দ প্রদান; প্রকল্পের কাজের বর্ণনা অনুযায়ী প্রকল্প এলাকায় সাইনবোর্ড দেয়া নিশ্চিত করা; সংস্কার ও পরিকল্পনার দিকসমূহ এবং বিদ্যমান বিধি প্রবিধানগুলো সংশোধন ও হালনাগাদ করা; যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার নিরসন, বন্যায় ও প্রাকৃতিক দুযোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে খাদ্য বিতরণ ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এনডিসি, অতিরিক্ত সচিব মো. আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার মহোত্তম এনডিসি, যুগ্মসচিব সজল কান্তি বনিক, যুগ্মসচিব কংকন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কে.এস. মং, উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণচন্দ্র চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্বে) জসীম উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মালেকা পারভীন, উপসচিব জেসমিন আক্তার, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের সিইও খোন্দকার মোহাম্মদ রিজাউল করিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।