কাজী মুজিবুর তোমার জন্য একটি স্নাইপার বুলেটই যথেষ্ট
কামাল পারভেজ, চট্টগ্রাম।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএফ)-এর ফেসবুক পেইজ থেকে সরাসরি ও প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান কাজী মোঃ মজিবর রহমানকে। গত ২৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে “kuki-chin national army-chittagong” নামে তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেইজে লিখিত স্ট্যাটাসে “কাজী মুজিবুর, তোমার জন্য একটি স্নাইপার বুলেটই যথেষ্ট” এই বলে চরম হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এই ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সচেতন মহলে তীব্র উত্তেজনা ও শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে হুমকির মুখে সেনাবাহিনীর বান্দরবান জেলা রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডারের ছবি যুক্ত থাকায় পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর বলে মনে করা হচ্ছে।
ফেসবুক স্ট্যাটাসটিতে কাজী মোঃ মজিবর রহমানকে সরাসরি লক্ষ্য করে বলা হয়েছে: “কেএনএফ আবার শক্তভাবে ফিরে আসবে সেদিন তোমার জন্যে একটি স্নাইপার বুলেটই যথেষ্ট।”
হুমকিতে কাজী মুজিবুরের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘অনুপ্রবেশ’ করে ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণে বাধা দেওয়া এবং ধর্মবিরোধী বক্তব্যের মাধ্যমে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগ তোলা হয়। কেএনএফ দাবি করে, এই পাহাড় তাদের পূর্বপুরুষদের ভূমি এবং এখানে বম খ্রিস্টান ও মারমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে।
হুমকির লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়: “স্মরণাতীতকাল থেকে এই পাহাড়ের বুকে বম জনগোষ্ঠী খ্রিস্টান ও মারমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা একসাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। ধর্মবিশ্বাসের কারণে কখনো ঝামেলা হয়নি। এক দশকের মধ্যে এই রিক্সাওয়ালা কাজী মুজিবুর রহমান বান্দরবনে অনুপ্রবেশ করে পাহাড়ে কোন গীর্জা করা যাবে না, মন্দির করা যাবে না, প্যাগোডা নির্মাণ করা যাবে না, আরও কত কিছু নিয়ে উচ্চ কণ্ঠে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ধর্মবিরোধী বক্তব্য রেখে আসছে। এই পাহাড় কি তোর বাপের? এই পাহাড় আমাদের পূর্বপুরুষদের ভূমি।”
হুমকি কেবল কাজী মোঃ মজিবর রহমানের ওপর সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এতে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। স্ট্যাটাসটিতে বলা হয়েছে: “সেখানে বাংলাদেশের সকল সেনাবাহিনীর কমান্ডো ফোর্স এসে অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে কুকি জাতির নিজ বানানো গাদাবন্দুক দিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধে পরাজিত হতে বাধ্য সেনাবাহিনীকে। সেই খোঁজখবর আইএসপিআর থেকে রাখ। … হাজার হাজার সেনা ক্যাম্প সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের সশস্ত্র সংগ্রামকে বাধা সৃষ্টি করা যাবে সেই চিন্তা করো না! মনে রেখো আমরা কেএনএফ! শান্তির উপায়ে কোন সমস্যা সমাধান না চাইলে সশস্ত্র উপায়ে সমাধানের চেষ্টা করলে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে সমাধান হবে।”
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই হুমকিতে কাজী মোঃ মজিবর রহমানের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বান্দরবান জেলা রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম রাকিব ইবনে রেজওয়ান এর ছবিও জুড়ে দেওয়া হয়। এর ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সচেতন জনসাধারণ মনে করছেন, কেএনএফ এই হুমকির মাধ্যমে কার্যত পার্বত্য চট্টগ্রামের পুরো সেনাবাহিনীকে সরাসরি চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
কেএনএফ তাদের স্ট্যাটাসে কাজী মোঃ মজিবর রহমান সহ আরও একজনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে, উল্লেখ করেছে যে “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী আর মদদদাতা সমানভাবে দায়ী ও অপরাধী।”
এই ধরনের প্রকাশ্যে সশস্ত্র হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে বান্দরবান জেলায় নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতিটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বান্দরবান অঞ্চলে কেএনএফ-এর তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর চলমান অভিযানের প্রেক্ষাপটে এই হুমকি নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কেএনএফ-এর এই চরম হুঁশিয়ারি পার্বত্য অঞ্চলে নতুন করে সংঘাতের জন্ম দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। বিচ্ছিন্নতাবাদী এই গোষ্ঠীর তৎপরতা দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। এটি বম সম্প্রদায়ের নেতা নাথান বমের নেতৃত্বে গঠিত হয়। সরকারি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এটি কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) নামে একটি সামরিক শাখা পরিচালনা করে। অতীতেও এই গোষ্ঠীটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি এবং সেনাবাহিনীর ওপর হামলার মতো ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বম, পাংখুয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমি এই ছয়টি জাতিগোষ্ঠী নিয়ে ‘কুকি-চিন রাজ্য’ গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে।











