ঢাকা | ডিসেম্বর ৮, ২০২৫ - ১:৩৬ অপরাহ্ন

শিরোনাম

ওটি বয় করলেন ক্যানসার রোগীর অপারেশন! কেটে ফেলতে হলো নারীর সংক্রমিত স্তন

  • আপডেট: Monday, December 8, 2025 - 11:45 am

ফরিদপুর সংবাদদাতা।। ফরিদপুরে একটি প্রাইভেট হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের কর্মচারীর (ওটি বয়) বিরুদ্ধে অস্ত্রোপচারের অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে ভুক্তভোগী রোগী অন্য একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নানা তদবির চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগী ও স্বজনরা জানান, ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকায় অবস্থিত সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালে এক নারী স্তন ক্যানসারের টিস্যু সংক্রমণ পরীক্ষার (বায়োপসি) জন্য আসেন। এ সময় অপারেশন থিয়েটারের কর্মচারী (ওটি বয়) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ওই নারীকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহ করেন। এরপর ১৫ দিনের মধ্যে অস্ত্রোপচারস্থলে মাত্রাতিরিক্ত সংক্রামকের কারণে একটি স্তন কেটে ফেলতে হয়েছে।

অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহের পুরো প্রক্রিয়াটি করেন হাসপাতালটির অপারেশন থিয়েটারের কর্মচারী শেখ নিয়ামুল। ভুক্তভোগী নারী ফরিদপুর শহরতলির কানাইপুর ইউনিয়নের খাসকান্দি গ্রামের প্রবাসী সরোয়ার আলমের স্ত্রী ববিতা বেগম (২৮)। তার ৭ বছর ও ১ বছর বয়সি দুইটি ছেলে সন্তান রয়েছে।

হাসপাতালটিতে চিকিৎসার নথিপত্র এবং ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৮ নভেম্বর পূর্বপরিচিত ওই ওটি বয়ের শরণাপন্ন হয়ে সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আতিকুর আহসানের কাছে যান তিনি। একপর্যায়ে এই চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে বায়োপসি পরীক্ষার জন্য নির্দেশনা দেন। পরে তিনি চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হলে হাসপাতালটির ওটি বয় নিয়ামুল তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না যাওয়ার জন্য বোঝান এবং অল্প খরচে নিজেই কাজ করে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। তখন নিয়ামুলকে বলেছিলাম, আমার দুটি বাচ্চা আছে, কোনো ক্ষতি যেন না হয়। একপর্যায়ে ওটি রুমে নিয়ে তিনি একাই অপারেশন করেন।

তিনি আরও জানান, অস্ত্রোপচার শেষে চারটি সেলাই দেন এবং নিয়ামুল নিজেই প্রেসক্রিপশন লিখে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। ১৫ দিন পরে বায়োপসি পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পান। এরই মধ্যে অস্ত্রোপচারস্থলে মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণ দেখা দেয়। এরপর ২ ডিসেম্বর পুনরায় চিকিৎসক আতিকুর আহসানের শরণাপন্ন হয়ে ঘটনা খুলে বলেন। এরপর ওই চিকিৎসক সংক্রমণের ভয়াবহ মাত্রা তুলে ধরে ৪ ডিসেম্বর ফরিদপুর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। ওইদিনই তার সংক্রামক স্তনটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে ফেলা হয়।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ইউনিট প্রধান আতিকুর আহসান জানান, এ ধরনের টিস্যু সংগ্রহের জন্য চিকিৎসক দ্বারা একটি ফাঁপা সুচ ব্যবহার করে স্তনের পিণ্ড বা অস্বাভাবিক জায়গা থেকে কোষ বা টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। তবে প্রয়োজন অনুসারে অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এসব তোয়াক্কা না করেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহ করে ওই ওটি বয়।

তিনি বলেন, পুরো স্তন নয়, সংক্রমিত অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য ওই ওটি বয় দায়ী। এ ধরনের অস্ত্রোপচার করার অধিকার ওটি বয়ের নেই।

এদিকে বায়োপসি পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে অভিযুক্ত নিয়ামুলের আরেক প্রতারণা দেখা যায়। পরীক্ষাটি করানো হয় ঢাকা ধানমন্ডির গ্রিন রোড এলাকার এনএন ল্যাব থেকে। রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, নমুনাটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয়েছে। তবে এর কোনো তথ্য সত্য নয় বলে পরে স্বীকার করেন অভিযুক্ত নিয়ামুল।

এছাড়া রোগীর স্বজন ও স্থানীয়রা অভিযুক্ত কর্মচারী শেখ নিয়ামুলকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি দোষ স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন।

সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানের সবার অজান্তে সে এই কাজটি করেছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মাহামুদুল হাসান বলেন, এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ এবং এর সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।