এমএইচ ৩৭০ রহস্যজনক হারিয়ে যাওয়ার ১০ বছরেও মেলেনি কোন খোঁজ
ওয়াসিম সিদ্দিকী(ওয়াইস কুরুনি) : নিখোঁজ বিমানের খোঁজে চলা ইতিহাসের বৃহত্তম অনুসন্ধান অভিযান হওয়া সত্ত্বেও এমএইচ ৩৭০ বিমানটি এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
খুঁজে পাওয়া যায়নি ধ্বংসাবশেষও।
১০ বছর পূর্ণ হলো এমএইচ ৩৭০ অন্তর্ধান রহস্যের।
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৩৭০ বা এমএইচ ৩৭০ একটি নিয়মিত যাত্রিবাহী বিমান ছিল, যা ২০১৪ সালের ৮ মার্চ মালয়েশিয়ার কুয়ালা লামপুর থেকে চিনের বেজিং যাওয়ার পথে মাঝ আকাশে হারিয়ে যায়।
কুয়ালা লামপুর থেকে উড়ে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক পর থেকেই নিরুদ্দেশ হয়ে যায় এমএইচ ৩৭০।
আর তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। শুক্রবার সেই অন্তর্ধান রহস্যের ১০ বছর পূর্ণ হল।
এমএইচ ৩৭০ বিমানটি নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার পর প্রায় বিশটিরও বেশি দেশ সেই বিমান খুঁজে বার করতে তৎপর হয়েছিল। তবে লাভ তেমন কিছুই হয়নি।
প্রায় ১৬ দিন ধরে ব্যাপক খোঁজার পরে সেই বছর ২৪ মার্চ মালয়েশিয় সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, চিন যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাংশে বিমানটি সমুদ্রে ভেঙে পড়ে। যাত্রীরা কেউ বেঁচে নেই বলেও মালয়েশিয়ার সরকার জানিয়েছিল।
এমএইচ ৩৭০ বিমানে ২২৭ জন যাত্রী এবং ১২ জন কর্মী ছিলেন। তবে তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন চিনের নাগরিক।
সে দেশের সরকার জানিয়েছিল, উপগ্রহচিত্র দেখে জানা গিয়েছে, সমুদ্রে পতনের আগে বিমানটি টানা ৭ ঘণ্টা ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাংশের দিকে উড়ে গিয়েছিল।
এর পরেও বিমানটির খোঁজে ভারত মহাসাগরের ১ লক্ষ ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রায় তিন বছর ধরে অনুসন্ধান অভিযান চালানো হয়।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বিমানটির খোঁজে চলতে থাকা বিভিন্ন অভিযান বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়ার সরকার।
এই ১০ বছরের মধ্যে বেশ কিছু বিমানের ধ্বংসাবশেষ ভারত মহাসাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসাবশেষের কয়েকটি এমএইচ ৩৭০-এর অংশ বলে দাবিও করা হয়েছিল।
নিখোঁজ বিমানের খোঁজে চলা ইতিহাসের বৃহত্তম অনুসন্ধান অভিযান হওয়া সত্ত্বেও এমএইচ ৩৭০ বিমানটি কখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। খুঁজে পাওয়া যায়নি তেমন কোন প্রামাণ্য ধ্বংসাবশেষও।
বিমানটি কী করে নিখোঁজ হল, তা নিয়ে অনেক তত্ত্ব রয়েছে। অনেকের দাবি, ওই বিমানের চালককে বিমানে থাকা কেউ খুন করেছিলেন। অনেকে আবার মনে করেন আত্মহত্যা করেছিলেন বিমানচালক।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য বিমানটি মাঝ আকাশে ধ্বংস হয়।
আবার অনেকের বিশ্বাস, বিমানটিকে অপহরণ করা হয়েছিল বা বিমানে থাকা যাত্রী এবং কর্মীরা কোনও অজানা কারণে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন।
কেউ কেউ মনে করেন, বিমানের ভার অতিরিক্ত হওয়ার কারণে সেটি মাঝ আকাশে নিয়ন্ত্রণ হারায়।
বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার মাস দুয়েক পর ব্রিটিশ সাংবাদিক নাইজেল ক্যাথর্ন ‘ফ্লাইট এমএইচ ৩৭০: দ্য মিস্ট্রি’ নামক প্রতিবেদনে দাবি করেন, ব্রিটেন-থাইল্যান্ড যৌথ সামরিক মহড়া চলাকালীন ওই বিমানটি গুলিবিদ্ধ হয় এবং ভেঙে পড়ে সেটি।
প্রায় একই সময়ে মালয়েশিয়ার নেতা মহাথির বিন মহম্মদ সন্দেহ প্রকাশ করেন, বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার নেপথ্যে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র হাত থাকতে পারে। অনেকে আবার গোটা ঘটনায় চিনের ‘হাত’ রয়েছে বলে দাবি করেন।
এমএইচ ৩৭০ বিমানটির খোঁজ না মেলায় চিনের বহু মানুষ মালয়েশিয়া বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, বিমানটি খুঁজে বের করার ইচ্ছা মালয়েশিয়া সরকারের নেই।
এমএইচ ৩৭০ নিয়ে এই ১০ বছরে অনেক রহস্য তৈরি হয়েছে। তবে নিখোঁজ বিমানযাত্রীদের একাংশের পরিবারের দাবি, ওই যাত্রীরা এখনও বেঁচে রয়েছেন। কিন্তু কোনও ভাবে যোগাযোগ করার পরিস্থিতি নেই তাঁদের।
সম্প্রতি, ওই পরিবারগুলি নিখোঁজ বিমানটি খোঁজার জন্য নতুন করে অভিযান শুরুর দাবি তুলেছে। মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় প্রমাণ পেলে তিনি আবার অনুসন্ধান অভিযান শুরু করবেন।
অন্য দিকে, আমেরিকার একটি সংস্থা আবার দাবি করেছে, নিখোঁজ এমএইচ ৩৭০ বিমানটি কোথায় রয়েছে, তা নিয়ে উপযুক্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে।
সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিপেনডেন্ট’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘ওশান ইনফিনিটি’ নামে টেক্সাসের ওই সামুদ্রিক রোবোটিক্স সংস্থা দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে একটি নতুন অনুসন্ধান অভিযান শুরু করার জন্য মালয়েশিয়া সরকারের কাছে প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
ওই সংস্থা আরও জানিয়েছে, তারা বিমানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে না পেলে মালয়েশিয়া সরকারের থেকে কোনও টাকা নেবে না।