উন্নয়নের মহাসড়কে পার্বত্য চট্টগ্রাম
মো: হাবীব আজম,রাঙামাটি: গত ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৬ বছর পূর্তি হলো। ২৬ বছর আগে বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএস) মধ্যে দীর্ঘ দু’যুগের বেশি সময় ধরে সশস্ত্র আন্দোলন চলার পর ঐতিহাসিক এ চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তির ফলে পার্বত্য জেলাসমূহে বিরাজমান দীর্ঘ সংঘাতের অবসান হয় এবং অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন পরিবেশের অবতারণা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও আন্তরিকতার কারণেই অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সেখানকার বিভিন্ন ভাষাভাষী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ সবার জীবনে শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির অভিযাত্রায় পাহাড়ি জনপদে বর্তমানে চোখ ধাঁধানো উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনকেন্দ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবনে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। উন্নয়ন কৌশলের অন্যতম ভিত্তি হলো অবকাঠামোগত উন্নয়ন। রাস্তা, সেতু এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যক সংযোগ প্রকল্পগুলো কেবলমাত্র পরিবহনের সুবিধাই দেয়নি বরং প্রত্যন্ত অঞ্চলকেও সংযুক্ত করেছে এবং শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে ব্যবধান কমিয়েছে। অবকাঠামোর উন্নতি শুধু পার্বত্যবাসীদের জীবনকে সহজ করেনি বরং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বারও খুলে দিয়েছে। বিশেষ করে উঁচু-নিচু পাহাড়ের গা ভেসে সরীসৃপের মতো নির্মিত হয়েছে শত শত কিলোমিটারের ঝিগঝাগ পিচঢালা মসৃণ পাহাড়ি সড়ক। সড়কের পাশাপাশি বড় বড় ব্রিজ-কালভার্ট এক পাহাড়কে আরেক পাহাড়ের সঙ্গে যুক্ত করেছে।
বর্তমান সরকারের অন্যতম সাফল্যের একটি অন্যতম খাত হলো, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে গত ১৫ বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। একটি স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থার তত্ত্বাবধানে দেশের অন্যান্য খাতের মতো যোগাযোগ খাত পেয়েছে উন্নয়নের ধনাত্মক মাত্রা।
তিন পার্বত্য জেলায় ১ হাজার ২১২ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৭০০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে- যা পরবর্তীতে পাকাকরণের মাধ্যমে জনগণের যাতায়াতের দুর্গম পথকে সুগম করে দিতে বদ্ধপরিকর রয়েছে এ সরকার।
৬১৪ কিলোমিটার বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে। পার্বত্য তিন জেলায় ৯ হাজার ৮৩৯ মিটার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। শুধু রাঙামাটি জেলাতেই নির্মাণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৯২৮ মিটার ব্রিজ। একই সঙ্গে কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে ১৪১ মিটার। ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক দুর্গম পাহাড়ি জনপদের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপকে বাস্তবায়ন করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার।
আগে দুর্গম পাহাড়ের বাসিন্দাদের কেউ অসুস্থ হলে মাইলের পর মাইল হেঁটে অথবা রোগীকে কাঁধে তুলে নিতে হতো নিকটস্থ হাসপাতাল বা চিকিত্সকের কাছে। নিকটস্থ হাসপাতাল মানে সেটি অন্তত ১০-১৫ কিলোমিটার দূরে। দুর্গম সেই পাহাড়ে পায়ে হেঁটে চলাই ছিল যাতায়াতের একমাত্র ব্যবস্থা। তবে পাহাড়ের সে চিত্র বদলে গেছে। এখন আর রোগীকে পায়ে হেঁটে যেতে হয় না বা কাঁধেও তুলতে হয় না। বরং চান্দের গাড়ি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা দিয়ে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে খুব সহজেই চিকিৎসকের কাছে নেওয়া যায়। এতে করে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একদিকে যেমন দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন তারা। পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্ত সড়ক প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার। ২০৩৬ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত প্রথম ধাপে ৩১৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ শেষ হয়েছে। পুরো কাজ শেষ হলে এটি হবে দীর্ঘ সড়ক নেটওয়ার্ক। মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, দেখতে পিকআপের মতো যাত্রীবাহী চান্দের গাড়ি, বাস, মাইক্রোবাস ও জিপ নিয়মিত চলাচল করছে সড়কগুলোতে।
রাঙামাটি জেলার এসপি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, জেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক। পাহাড়ি-বাঙালিরা পুলিশকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে এখানে এমন অবস্থা বিরাজ করছে অপরাধ করেও কারোর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা এখানে অন্যান্য বাহিনী সেনাবাহিনী ও বিজিবির সঙ্গে সমন্বয় করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রেখেছি।
রাঙামাটি চট্টগ্রাম বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ সৈয়দ হোসেন বলেন, বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় রাঙামাটি চট্টগ্রাম সড়ক উন্নয়ন হওয়ায় বাস,ট্রাক,সিএনজি সহ সকল যানবাহন চলাচলে সুবিধা হয়েছে। সড়কে আগের তুলনায় যানবাহনও বাড়ছে।
সৈয়দ হোসেন এসময়ে বলেন, যাত্রীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে রাঙামাটি থেকে কক্সবাজার সড়কে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বাস সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছি তাই সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
চট্টগ্রাম বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ ইউনুছ মিয়া বলেন, শান্তি চুক্তির পর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়। শান্তিচুক্তির আগে যাত্রীবাহি বাস চলাচল করে একটি এবং বিকেল পাঁচটার মধ্যে। বর্তমানে অসংখ্য যাত্রীবাহি বাস চলাচল করছে, সেই সাথে রাঙামাটি- ঢাকা এসি ননএসি মিলে ১৬টি কোম্পানির যাত্রীবাহি বাস চলাচল করছে।
চট্টগ্রাম বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, শান্তি চুক্তির আগে যাতায়াতে নিরাপত্তার সংকট ছিলো বর্তমানে নির্ভয়ে আমাদের শ্রমিকরা যানবাহন নিয়ে যাতায়াত করছে, যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবাটুকু দিচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন খোরশেদ আলম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে শান্তিচুক্তির পটভূমিতে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, পর্যটন ইত্যাদি সব দিক থেকে পার্বত্য অঞ্চল এখন আরও বেশি উন্নত ও সমৃদ্ধ জনপদে পরিণত হয়েছে বলে দাবি রাখে।