ঢাকা | অক্টোবর ২৯, ২০২৫ - ১০:০২ অপরাহ্ন

শিরোনাম

ইউপিডিএফের গুলিতে নিহত তিনজন পাহাড়ি হত্যার বিচারের দাবিতে বান্দরবানে পিসিসিপির বিক্ষোভ

  • আপডেট: Wednesday, October 29, 2025 - 6:16 pm

বান্দরবান প্রতিনিধি। ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত তিনজন সাধারণ পাহাড়ি যুবক হত্যার সুবিচারের দাবিতে (২৯ অক্টোবর) বুধবার বিকালে শহরের শহীদ আবু সাঈদ মুক্তমঞ্চের সামনে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) বান্দরবান জেলা শাখার পক্ষ থেকে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে পিসিসিপি বান্দরবান জেলা সভাপতি আসিফ ইকবালের সভাপতিত্বে ও দপ্তর সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পিসিএনপি’র বান্দরবান জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজালাল রানা, পিসিএনপি পৌর কমিটির সভাপতি শামসুল হক শামু, পিসিসিপি বান্দরবান জেলা সাধারণ সম্পাদক হাবিব আল মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর হোসেন ইমন, জমির উদ্দীন, জানে আলম প্রমুখ।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, মিথ্যা ধর্ষণের ইস্যুতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি পৌরসভা এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ ও এর অঙ্গসংগঠনসমূহ গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সকাল থেকে খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার রামসু বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সাধারণ জনগণকে উসকে দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে গুইমারা-খাগড়াছড়ি রাস্তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়। ঐদিন সকাল সাড়ে দশটায় ইউপিডিএফের ক্যাডার এবং সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এলাকার বাঙালি জনগোষ্ঠীর সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয়। এই পর্যায়ে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, ইট-পাটকেল, গুলতি ও লাঠিসোটা নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে সেনাবাহিনীর উপর হামলা চালায়। এতে সেনাবাহিনীর ৩ জন অফিসারসহ ১০ জন সদস্য আহত হয়। একই সময় তারা রামগড় এলাকায় বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর করে এবং বিজিবি সদস্যদের আহত করে।

সংঘর্ষ চলাকালীন আনুমানিক সাড়ে এগারোটার দিকে রামসু বাজারের পশ্চিম দিকে অবস্থিত উঁচু পাহাড় থেকে ইউপিডিএফ (মূল) সশস্ত্র দলের সদস্যরা ৪/৫ বার অটোমেটিক অস্ত্র দিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত পাহাড়ি, বাঙালি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত সেনাসদস্যদের লক্ষ্য করে আনুমানিক ১০০-১৫০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলে সংঘর্ষে লিপ্ত এলাকাবাসীর মধ্যে অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়। এমতাবস্থায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর টহল দল দ্রুত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করার লক্ষ্যে উক্ত এলাকায় গমন করে। সেনাবাহিনীর তৎপরতায় উক্ত সশস্ত্র দলটি দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে। এ সময়ে সাধারণ পাহাড়ি জনতার মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিওতে স্থানীয়দের বলতে শোনা যায়—ইউপিডিএফ গুলি করেছে, ইউপিডিএফের গুলিতেই রামসু বাজারে বিক্ষোভরত তিনজন সাধারণ পাহাড়ি যুবক আখ্র মারমা, আথুইপ্রু মারমা ও থৈইচিং মারমা মারা যায়।

ইউপিডিএফ একদিকে সাধারণ পাহাড়ি জনতাকে উসকে দিয়ে বিক্ষোভ করায়, অন্যদিকে পাহাড়ের চূড়া থেকে গুলি করে আবার পাহাড়ি জনতাকেই হত্যা করে। এই গোপন হত্যার উদ্দেশ্য ছিল পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামকে উত্তপ্ত করে সহিংসতা ছড়িয়ে দিয়ে সেনাবাহিনী ও সরকারকে দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং তাদের রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়া। যার মূল লক্ষ্য ছিল দেশি-বিদেশি চাপ প্রয়োগ করে স্বায়ত্তশাসনের দাবি আদায় করা।

কারণ এর আগে গত ১০ মে ২০২৫ তারিখে ইউপিডিএফ ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠক করে ঘোষণা দিয়েছিল যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসন না এলে সংকট সৃষ্টি হবে। মূলত এর পর থেকেই ইউপিডিএফ ফন্দি আঁটে—কিভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংকট দেখানো যায়। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ইউপিডিএফ পাহাড়ে একের পর এক সংঘাত সৃষ্টি করে, পাহাড়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে যাতে করে তাদের দাবির পক্ষে দেখানো যায় “পাহাড়ে সংকট চলছে, স্বায়ত্তশাসন দিয়ে দাও।”

তাদের অনৈতিক দাবি আদায় করতে গিয়ে দেশে-বিদেশে পাহাড়ে সংকট দেখানোর জন্য তারা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তিনজন সাধারণ পাহাড়িকে নিজেরাই হত্যা করে বলি দেয়। যাতে এই তিনজন সাধারণ পাহাড়ির লাশ দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করা যায়, আর তখনই উত্তপ্ত পাহাড়ে সংকট চলছে বলে তাদের দাবি আদায় করতে সুবিধা হবে। এমন ভয়ংকর পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তিনজন পাহাড়ি যুবকের হত্যা নিয়ে একের পর এক বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে পাহাড়কে উত্তপ্ত রাখার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ।

তারই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল ৩০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে প্রদীপ প্রজ্বলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইউপিডিএফের ছত্রছায়ায় শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদ। তাই পাহাড়ে-সমতলে সকল দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। ইউপিডিএফের মিথ্যা প্রচারণায় ও তাদের কর্মসূচির কারণে বিভ্রান্ত না হয়ে পাহাড়ের সঠিক তথ্য জানতে হবে। দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফকে পাহাড়ি-বাঙালি সকলে মিলে বয়কট করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ জাতির সামনে গুটিকয়েক ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীর ষড়যন্ত্র কখনো সফল হবে না।

সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, বিগত ১৯ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত খাগড়াছড়ি এবং গুইমারা এলাকায় বিভিন্ন ঘটনাকে পুঁজি করে আইনের আশ্রয় না নিয়ে পার্বত্য অঞ্চলকে ইউপিডিএফ কর্তৃক অস্থিতিশীল ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির বিষয়টি ছিল একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ। গুইমারা রামসু বাজারে আখ্র মারমা, আথুইপ্রু মারমা ও থৈইচিং মারমা হত্যায় জড়িত সকল ইউপিডিএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে হবে; অন্যথায় পিসিসিপি আরও কঠোর কর্মসূচি পালন করবে।