ঢাকা | ডিসেম্বর ১২, ২০২৪ - ৯:৪২ পূর্বাহ্ন

আসাদের পতনে কোন দেশ কী বলছে

  • আপডেট: Sunday, December 8, 2024 - 3:04 pm

জাগোজনতা ডেস্ক : অপ্রতিরোধ্য গতিতে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা ১২ দিনে পতন ঘটিয়েছে সিরিয়ার আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের এবং বাশার আল আসাদের ২৪ বছরের শাসনামলের। বিদ্রোহী যোদ্ধারা ঘোষণা দিয়েছে, দেশটি এখন ‘মুক্ত’ হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বেশ জোড়ালো আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। দেখে নেওয়া যাক কোন দেশ কী বলছে:

যুক্তরাষ্ট্র

হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার দল সিরিয়ার অস্বাভাবিক ঘটনাবলী নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।
এদিকে, নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়ার সমর্থন হারানোর পর আসাদ ‘তার দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আসাদ চলে গেছে। তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বে তার রক্ষাকর্তা রাশিয়া তাকে আর রক্ষা করতে আগ্রহী ছিল না।
ট্রাম্প লিখেছেন, প্রথমত রাশিয়ার সেখানে থাকার কোনো কারণ ছিল না। তারা ইউক্রেনের কারণে সিরিয়ার প্রতি সমস্ত আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল।

চীন

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, বেইজিং সিরিয়ার পরিস্থিতির উন্নয়ন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং আশা করছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিরিয়ার স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। চীন সরকার নিরাপদে ও সুশৃঙ্খলভাবে সিরিয়া ছাড়তে ইচ্ছুক চীনা নাগরিকদের সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছে এবং তাদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা সিরিয়ায় চীনা প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাস্তব ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিরিয়ার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। বর্তমানে সিরিয়ায় চীনা দূতাবাস রয়েছেন এবং আমরা প্রয়োজনে চীনা নাগরিকদের সম্পূর্ণ সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখব।

জার্মানি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক আল-আসাদের পতনকে সিরিয়ার জনগণের জন্য আসাদের পতনকে ‘বড় স্বস্তি’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, আসাদের পতন সিরিয়ার লাখ লাখ মানুষের জন্য একটি বড় স্বস্তি। দেশটি এখন মৌলবাদীদের হাতে পড়বে না।

ইসরায়েল

ইসরায়েলি প্রবাসীবিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই চিকলি অধিকৃত গোলান মালভূমির হারমন পর্বতে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ নবায়নের কথা বএলছেন। সেই সঙ্গে সিরিয়ার সাথে ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতির ভিত্তিতে একটি নতুন প্রতিরক্ষা লাইন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সিরিয়ার বেশিরভাগ এলাকা এখন আল-কায়েদা ও আইএসআইএল-এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রণে।
প্রসঙ্গত, সিরিয়ার গোলান মালভূমির বেশিরভাগ এলাকা ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল দখল করে নেয় এবং ১৯৮১ সালে তা দখল করে নেয়।
পৃথক এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে। সিরিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পর গোলান মালভূমির সম্প্রদায় এবং ইসরায়েলের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাফার জোন এবং তার প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য বেশ কয়েকটি জায়গায় বাহিনী মোতায়েন করেছে।

ইতালি

ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেন, আমি সিরিয়ার পরিস্থিতির বিবর্তন গভীর মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছি। আমি দামেস্কে আমাদের দূতাবাস ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। জরুরি বৈঠক ডেকেছি।

তুর্কি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, সিরিয়ার সরকারের পতন ঘটেছে এবং দেশের নিয়ন্ত্রণ হাতবদল হচ্ছে। এটা রাতারাতি ঘটেনি। ২০১১ সালে গণতন্ত্রের ওপর আল-আসাদের দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গত ১৩ বছর ধরে দেশটি অস্থির অবস্থায় রয়েছে।
সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে দেওয়া উচিত নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, বিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য কাজ করব।
তিনি বলেন, নতুন সিরিয়া যেন প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি না হয়ে হুমকি দূর করে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত

প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ বলেছেন, রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগানোর জন্য অ-রাষ্ট্রীয় শক্তিগুলোকে সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।
বাহরাইনের রাজধানীতে মানামা ডায়ালগ নিরাপত্তা ফোরামে গারগাশ বলেন, সিরিয়ার ঘটনাবলী রাজনৈতিক ব্যর্থতা এবং সংঘাত ও বিশৃঙ্খলার ধ্বংসাত্মক প্রকৃতিরও স্পষ্ট ইঙ্গিত।

জাতিসংঘ

সিরিয়ায় জাতিসংঘের দূত গেইর পেডারসেন বলেন, আমরা এমন একটি পরিস্থিতি খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছি, যেখানে এ থেকে রাজনৈতিক পথ পাওয়া যাবে।
সেই রাজনৈতিক পথটি আগের চেয়ে অনেক আলাদা হওয়া দরকার. এটি এমন একটি প্রক্রিয়া হওয়া দরকার, যা প্রত্যেককে অন্তর্ভুক্ত করে এবং যেখানে আমরা সত্যই ঐক্য, স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার দিকে মনোনিবেশ করি। অনেক ক্ষত আছে, যা সারিয়ে তোলা দরকার।