আমাদের শিল্প আমাদের রক্ষা করতে হবে : বিজিএমইএ সভাপতি
আমাদের শিল্প আমাদের অধিকার আমাদের রক্ষা করতে হবে, বিজিএমইএ সভাপতি
ইউসুফ আলী খান।।
অনেকেই এই দেশ থেকে গার্মেন্টস ব্যবসা নিয়ে যেতে চায়, তারা আমাদেরকে শান্তিতে ব্যবসা করার খুব একটা সুযোগ দিবেনা। কিন্তু আমাদের শিল্প আমাদের অধিকার আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় চলমান নৈরজ্য, বিশৃঙ্খলা থেকে গার্মেন্টস শিল্পকে রক্ষায় আয়োজিত শ্রমিক জনতার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, গত এক বছরে প্রায় ২৭০ টা কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে নানা সমস্যার কারনে। এত কারখানা বন্ধ হয়ে যাবার পরেও বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকে আছে গার্মেন্টস শিল্প এবং আমাদের প্রবাসী ভাইদের রেমিট্যান্সের উপর। এখন এই ক্রান্তিকালে আমাদের যে ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ে এসে এই শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দেশকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে যারা আমরা তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। আজকে আমাদের ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা আছে আমাদের কারখানার শ্রমিক ভাইবোনরা সবসময় আমাদের সাথে আছেন। কখনো কখনো মঝেমধ্যে কয়েক বছর পর পর সমস্যা হয়। সেই সমস্যা আপনারা আমরা সকলে হাতে-হাত মিলিয়ে সমাধান করেছি।
তিনি আরো বলেন, আজকে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে না দাঁড়াই তাহলে আপনারা অলরেডি পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন আমাদের দেশ থেকে ১০ থেকে ১৫ পার্সেন্ট অর্ডার শিফট করেছে অন্যদেশে। যেসব দেশের এই দেশ থেকে গার্মেন্টস ব্যবসা নিয়ে যাবার ইচ্ছে আছে তারা আমাদেরকে শান্তিতে ব্যবসা করার খুব একটা সুযোগ দিবেনা। কিন্তু আমাদের অধিকার আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের সবাইকে হাতেহাত মিলিয়ে এই সাময়িক দূর্যোগের সময় ঐক্যবদ্ধভাবে পাশে দাঁড়াতে হবে। অতীতেও আমরা যেভাবে সমস্ত সমস্যা অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজকে এখানে এসেছে, আজকে বাংলাদেশের নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ে আমি বিজিএমইএর সভাপতি হিসেবে সমস্ত মালিকদের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে আকুল আবেদন জানাই আপনারা সবাই সহযোগিতা করেন আমরা কালকে থেকে যেন কাজে যোগ দেই।
সমাবেশের সভাপতির বক্তব্যে সাভারের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির সহ-পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু বলেন,
ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ থেকে বিতারিত হবার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় যারা মামলা খেয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই সে এলাকা থেকে পালিয়ে এসে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে রয়েছে। গার্মেন্টসের এই অসন্তোষের পেছনে এই সমস্ত লোকেদের এক ধরনের হাত আছে এবং তারা নেপথ্যে কলকাঠি নারছে। তাই আমি ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বলবো আপনারাও খেয়াল করেন যাদেরকে আপনারা চিনেন না তারা এলাকায় কি করে তাদেরকে আপনারা প্রশ্ন করেন, তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেন। আপনারা এই এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেন।
তিনি আরো বলেন, অনেকেই বলছেন গার্মেন্টস শিল্পের অস্থিরতার পেছনে নাকি বিএনপির নেতাকর্মীর হাত রয়েছে। আমি ডা. দেওয়ান সালাউদ্দীন দুইবারের সংসদ সদস্য ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হিসেবে বলতে চাই, যদি আমাদের ব্যাপারে কোন অভিযোগ গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ বা সেনাবাহিনীর কাছে থাকে আপনারা যাকে ইচ্ছা তাকে গ্রেফতার করেন আমি কারো জন্য কোন রিকোয়েস্ট করবোনা। এছাড়া এখানে যারা বাড়ির মালিক আছেন আমি তাদেরকে অনুরোধ করবো আপনাদের বাড়িতে অনেক গার্মেন্টস শ্রমিক বসবাস করে আপনারা আজকে রাতে তাদের সবাইকে নিয়ে বসবেন এবং তাদেরকে একটু বুঝিয়ে বলবেন তারা যেন মালিকদের একটু সময় দেন। কারন অনেক অর্ডার অন্যান্য দেশে চলে যাচ্ছে এখানে দেশের বাইরেরও চক্রান্ত রয়েছে আপনারাও প্লিজ দায়িত্ব নেন তাদেরকে কাজে ফেরান। যেকোনো মূল্যে গার্মেন্টস বাঁচাতে হবে এটা রাস্ট্রীয় সম্পত্তি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হামীম গ্রুপের চেয়ারম্যানও সাবেক সংসদ সদস্য একে আজাদ বলেন, ইতিমধ্যে ৭৬টা কারখানায় শ্রমিকদের বেতন দিতে পারেনি ডিসেম্বর আসলে এটি দিগুণ হবে। বিদেশিরা কাজ না দিলে আমরা মেশিন বসায়া শ্রমিক দিয়ে কি করবো। নিজের বুঝ পাগলেও বুঝে কিন্তু আশুলিয়ার লোক বুঝিনা। সারা বাংলাদেশ বুঝে কিন্তু আমরা বুঝিনা। এখন আপনারা সিদ্ধান্ত নিবেন কারখানা চালাবেন নাকি চালাবেননা। আপনারা যদি কাজ না করেন আপনাদের সামনে যদি বাইরে থেকে লোক এসে কারখানা ভাংচুর করে আর আপনারা যদি না বাঁধা দেন তাইলে আমি কিভাবে বাঁধা দিব। এই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত আছেন আপনারাই সিদ্ধান্ত দেন কিভাবে কারখানা চালাবো। আমি যদি একবার কারখানা খুলি তাহলে আর বন্ধ করতে পারবোনা আপনাদের এই শক্তি যদি হেরে যায় সেসব সন্ত্রাসীদের কাছে যারা গ্যাঞ্জি আর হেলমেট পরে ৫০০টাকা দেয় কারখনা ভাংচুর করার জন্য। তাদের কাছে যদি আমরা হেরে যাই তাহলে আর সম্ভব নয়। যদি আমরা হেরে যাই তাহলে বায়ারদের কাছে আর কিছু বলতে পারবোনা। যদি গাছ বাঁচে তাহলে অবশ্যই ফল পাবেন। তাই আপনারা অতি সত্বর মালিকদের আশ্বস্ত করেন।
এসময় আরও উপস্তিত ছিলেন আল মুসলিম গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুল্লাহ, আশুলিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর, আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দেওয়ান মঈনুদ্দিন বিপ্লব, আশুলিয়া থানা বিএনপির সহ সভাপতি আসকর দেওয়ান, আশুলিয়া থানা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোঃ নুরুল ইসলাম, শ্রমিক দলের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক দেওয়ান মোঃ জিল্লুর রহমান, ধামসোনা ইউনিয়নের শ্রমিক দলের সভাপতি আবিদুর রহমান পাসান, আশুলিয়া থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রনি আহমেদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আশুলিয়া থানা সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মোঃ জিল্লুর রহমান মাস্টার,ইয়ারপুর ইউনিয়নের শ্রমিক দলের সভাপতি রবিউল ইসলাম।