‘আমাদেরই ব্যর্থতা’ ফায়ার ফাইটার নয়নের জানাজায় বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
জাগোজনতা অনলাইন : সচিবালয়ের সামনে আগুন নির্বাপণের সময় ট্রাকচাপায় নিহত ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়নের দক্ষতার জন্যই যে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল, তার জানাজায় অংশ নিয়ে সে কথা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তার ভাষায়, ওই সময় ওই সড়কে ট্রাক চলতে পারাটা একভাবে কর্তৃপক্ষেরই ‘ব্যর্থতা’।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর বঙ্গবাজারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরে নয়নের জানাজা হয়। তার আগে তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পক্ষ থেকে।
বুধবার রাত পৌনে ২টার দিকে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট সেখানে যায়।
আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত ফায়ার ফাইটার নয়ন পানির লাইন দিতে রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাক চাপায় গুরুতর আহত হন। তাকে চাপা দিয়ে ট্রাকটি পালিয়ে যায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক নয়নকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই তরুণের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুরে। মূল কর্মস্থল সিলেটের বিশ্বনাথ ফায়ার স্টেশন হলেও তাকে ঢাকায় এনে তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে সংযুক্ত করা হয়েছিল।
সে প্রসঙ্গ ধরে জানাজার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “আল্লাহই তাকে শহীদের মর্যাদা দান করবেন। সে খুবই ভালো ফাইটার ছিল বলে তাকে স্পেশাল টিমের জন্য আনা হয়েছিল। তার জন্য দোয়া করব, আল্লাহ যেন কবরের আজাব মাফ করে।”
সচিবালয়ে আগুন লাগার পরপরই সামনের রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ ও সেনা সদস্যরা সেখানে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। তারপরও কীভাবে ওই সময় ওই পথ দিয়ে বেপরোয়া গতিতে ট্রাক গেল, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
এ বিষয়ে উপদেষ্টার ভাষ্য, “ওই জায়গা দিয়ে ট্রাক যাওয়াটা আমাদের ব্যর্থতাই। ট্রাক ওই জায়গা দিয়ে যাওয়া উচিত ছিল না। তবে আমরা ট্রাক চালককে ধরে ফেলেছি। তাকে আমরা আইনের আওতায় অবশ্যই নিয়ে আসব।”
ট্রাকটি নয়নকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গণপূর্ত অধিদপ্তর এলাকায় জনতা ট্রাকচালক বেলাল হোসেন সুমন এবং তার সহকারী ফরহাদকে ধরে পুলিশে দেয়।
৩৫ বছর বয়সী সুমন ও ২০ বছর বয়সী ফরহাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর জানিয়েছেন।
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ‘ব্যর্থতা’ কিনা, সেই প্রশ্ন একজন সাংবাদিক উপদেষ্টার সামনে রাখেন নয়নের জানাজার পর।
জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “আমার একজন মারা গিয়েছে, এটি আমার ব্যর্থতা। অনেকেই এসব ভুলে যাবে, কিন্তু মা-বাবা ভুলবে না। তার মা বাবা যেন ভালো থাকতে পারে, সে বিষয়ে যা দেখা দরকার আমরা দেখব।”
একজন উপদেষ্টা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন নেতা এই অগ্নিকাণ্ডের পেছনে ষড়যন্ত্র থাকার কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ট তাদের সঙ্গে একমত কি না, তা জানতে চান একজন সাংবাদিক।
উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, “তদন্তের আগে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না।”
তিনি বলেন, “আমরা একটি হাই পাওয়ার তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। এ তদন্ত কমিটির ফলাফল আসলে আমরা জানতে পারব কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হল।”
আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আগুন নেভাতে কতক্ষণ লাগবে সেটা তো আমরা বলতে পারব না। সেটা পানি সরবরাহর ওপর নির্ভর করে, অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকে।
“তবে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। ১৯টি ফায়ার ইউনিট একসঙ্গে কাজ করেছে। যার ফলে এটি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।”
জানাজার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সোয়ানুর জামান নয়নের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তার মা-বাবার খোঁজ-খবর নেন।
ফায়ার ফাইটার নয়ন ২০২২ সালে ৬১তম ব্যাচে যোগ দিয়েছিলেন অগ্নি নির্বাপক বাহিনীতে। তিনি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার আটপনিয়া গ্রামের আক্তারুজ্জামানের ছেলে। ২৪ বছর বয়সী নয়ন ছিলেন দুই ভাইবোনের মধ্যে ছোট।