আনোয়ারায় দলিলে আরএস দাগ থাকলেই সীমাহীন ভোগান্তি: নামজারি নিয়ে চরম দুর্ভোগ
আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা।। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা ভূমি অফিসে নামজারি করতে গিয়ে সাধারণ ভূমি মালিকদের সীমাহীন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে দলিলে আরএস দাগ থাকলে নামজারি কার্যক্রম আরও জটিল ও দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হচ্ছে।
ভুক্তভোগী সেবাগ্রহীতারা জানান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপক ত্রিপুরা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এই হয়রানি প্রকট আকার ধারণ করেছে। যার ফলে শত শত ভূমি মালিক তাঁদের বৈধ অধিকার প্রতিষ্ঠায় চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। সামান্য ভুলত্রুটি দেখিয়ে বারবার ফাইল ফেরত পাঠানো হচ্ছে। কোনো নোটিশ ছাড়াই দীর্ঘ সময় ধরে ফাইল আটকে রাখার অভিযোগও পাওয়া গেছে। ভূমি অফিসে প্রতিদিনই দীর্ঘ লাইন, কর্মকর্তাদের অবহেলা, দায়িত্ব এড়িয়ে চলার প্রবণতা এবং সেবার পরিবর্তে অযথা জটিলতা সৃষ্টি করে জনগণের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা যেন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
মো. মিজান নামে এক ভুক্তভোগী জানান, “আমার বাপ-দাদার জায়গার নামজারি করতে এসেছি চার মাস ধরে। প্রতিবার নতুন অজুহাতে ফাইল আটকে রাখা হয়। এমন হয়রানি তো আগে কখনও দেখিনি।” তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা আইন মেনে কাজ করতে চাই। তবে কেন হয়রানির শিকার হবো?”
আবদুল কাইয়ুম নামে আরেক সেবাগ্রহীতা জানান, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সমস্ত কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও দালাল ছাড়া ফাইল নড়াচড়া করে না। কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে দালালচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে সাধারণ মানুষ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা স্পষ্ট দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অনিয়মের শামিল।
আনোয়ারার সচেতন নাগরিকরা জানান, ভূমি সেবা জনগণের মৌলিক নাগরিক অধিকার। সরকারি উদ্যোগে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালুর পর সেবা সহজ হওয়ার কথা থাকলেও মাঠ পর্যায়ে এর বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। নামজারি প্রক্রিয়ার জটিলতার সুযোগ নিয়ে কিছু কর্মকর্তা সুবিধা নিচ্ছেন, যা দৃষ্টিকটূ অনিয়ম এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এ বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধি কবির আহমেদ বলেন, “জনগণের ভোগান্তির এই চিত্র উদ্বেগজনক। দ্রুত তদন্ত করে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”
ভূমির মালিকরা এই হয়রানি বন্ধ করে সেবা নিশ্চিত করতে ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের সর্বোচ্চ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা বলেন, “জনগণের সঙ্গে এমন আচরণ চলতে পারে না। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে এই হয়রানির অবসান এখন সময়ের দাবি।”
এ ব্যাপারে জানতে আনোয়ারা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দীপক ত্রিপুরার সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাদিউর রহিম জাদিদ বলেন, “আমি এই প্রথমবার শুনছি। কেউ যদি সঠিক তথ্যভিত্তিক কোনো লিখিত অভিযোগ করে, তাহলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”











