আইএলএস-২ এই প্রথম চালু হচ্ছে শাহজালাল বিমানবন্দরে
জাগোজনতা ডেস্ক : প্রায় প্রতিবছর ঘন কুয়াশার কারণে ফ্লাইট ওঠানামা বিঘ্নিত হয়। শীত মৌসুম এলেই ফ্লাইট অবতরণ নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। এ জন্য ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে জরুরি অবতরণ করতে হয় বিমানসহ দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সের কিছু ফ্লাইটকে। এতে একদিকে যেমন মোটা অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির শিকার হন এয়ারলাইন্স মালিকরা, অন্যদিকে জরুরি অবতরণের কারণে সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফ্লাইটের মধ্যে ঝুঁকি নিয়েই সময় কাটতে হয় যাত্রীদের। এই সমস্যার সমাধানে শাহজালালে স্থাপন করা হয়েছে ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেমের (আইএলএস) উন্নত প্রযুক্তির আইএলএস-২। দেশে এই প্রথম এমন উন্নত ল্যান্ডিং সিস্টেম বসানো হলো। এর ফলে এখন থেকে আর বিমানবন্দরে ঘন কুয়াশা বা বৈরী আবহাওয়ায় বিমান চলাচল বিঘ্নিত হবে না। এতদিন আইএলএস-১ দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছিল, যা ঘন কুয়াশায় অল্প পরিসরে কাজ করে। সাধারণত খালি চোখে রানওয়ের অবস্থান শনাক্ত করে উড়োজাহাজ অবতরণ করান বৈমানিকরা। অবতরণের জন্য ন্যূনতম ৫০০ মিটার দৃষ্টিসীমা প্রয়োজন হয়। কুয়াশা বা বৈরী আবহাওয়ার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে এলে রানওয়ের অবস্থান শনাক্তের জন্য ব্যবহার করা হয় আইএলএস প্রযুক্তি। ১৯৮০ সালের দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরে আইএলএস-১ স্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা যায়, অন্য দেশের বিমানবন্দরে অবতরণের (ফ্লাইট ডাইভার্ট) কারণে প্রতিটি ফ্লাইটের জন্য ১০ হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হয় সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সকে। প্রায়ই বিমানবন্দরে ঘন কুয়াশার কারণে ফ্লাইট ডাইভার্টের ঘটনা ঘটে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা। এ ব্যাপারে বেবিচক সদস্য ও এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট (এটিএম) এয়ার কমডোর একেএম জিয়াউর হক জানান, শাহজালালে আইএলএস-২ চালুর প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি দেশের চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজার বিমানবন্দরে এই ল্যান্ডিং সিস্টেম স্থাপনের বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (আইকাও) একটি বিদেশি ফ্লাইট শাহজালালে পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন-অবতরণ করবে। এর পরই বেবিচককে আইএলএস-২ ক্যাটেগরির সনদ দেওয়া হবে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, বিমানবন্দরের আইএলএস স্থাপনের কাজ ৯৯ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখন শুধু একটা বিদেশি অবজারভেশন ফ্লাইট প্রয়োজন। আমরা সে অপেক্ষায়ই করছি। অবজারভেশন শেষ হলেও আইএলএসের কাজ আমরা পুরোপুরি শুরু করতে পারব। আশা করছি, ডিসেম্বরের তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহে আইএলএস-২ স্থাপনের বিষয়টি ঘোষণা দেবে আইকাও। বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, শাহজালালে আইএলএস-২ প্রযুক্তির ল্যান্ডিং সিস্টেম বসানো হলে ৩০০-৪০০ মিটার দৃষ্টিসীমার মধ্যেও বিমান অবতরণ করা যাবে। তবে ঘন কুয়াশা বা বৈরী আবহাওয়ায় অনেক সময় বৈমানিকের দৃষ্টিসীমা ৫০ থেকে শূন্য মিটারে নেমে আসে। তখন আইএলএস-২ প্রযুক্তিও আর কাজ করে না। এই সংকট মেটাতে দরকার হবে আইএলএস-৩ প্রযুক্তি।