অভিনব কায়দায় অনলাইনে প্রায় ১০০ কোটি টাকার প্রতারনা, চক্রের স্থানীয় ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ একটি আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র cry-ptobdf.cc ইনভেস্টমেন্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সাধারন বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে অনুমানিক প্রায় ১০০ কোটি টাকার প্রতারণা করে। চক্রের স্থানীয় বাংলাদেশী ০৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
গত ০৮/০২/২০২৪ তারিখে cry-ptobdf.cc ইনভেস্টমেন্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রতারণাকারী চক্রের তিন সদস্যকে পঞ্চগড় সদর এবং তার পার্শ্ববর্তী থানায় অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করে সাইবার পুলিশ সেন্টার, সিআইডি। গ্রেফতারকৃতরা আসামিরা হলেন মোসাদ্দেকুর রহমান নীড় (৩০), মোঃ আনোয়ার হোসেন (৩৮) এবং শাহিন ইসলাম (৩১)।
এর আগে সাইবার পুলিশ সেন্টারের কাছে একটি অভিযোগ আসে যে, একটি প্রতারক চক্র ভুক্তভোগীর নম্বরে অপরিচিত মোবাইল থেকে কল দিয়ে অনলাইনে কাজের অফার দেয়, যখন তিনি রাজি হন তখন ভিকটিমের সাথে প্রতারক চক্র হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে। ভিকটিমকে প্রাথমিক অবস্থায় শিখিয়ে দেয় তাকে ইউটিউবে সাবসক্রিপশন করতে হবে। প্রতি Youtube Subscription এর জন্য ১০০ টাকা করে ভিকটিমকে অফার দেওয়া হয়। এভাবে ভিকটিমকে প্রথম দুই দিন ৩০০-৫০০ টাকা দিয়ে তাকে কাজে উৎসাহি করে তোলে প্রতারক চক্র।
এর মাঝে চক্রটি ভিকটিমকে তাদের হোয়াটসঅ্যাপে ও টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করে নেয় যেখানে পূর্ব থেকেই আরও ভুক্তভোগী যুক্ত ছিলো। সেই সাথে তাদের তৈরীকৃত ও নিয়ন্ত্রিত ওয়েবসাইট- https://www.cry-ptobdf.cc তে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেয়। প্রতারক চক্রের কাছে বিকাশ ও ব্যংকে টাকা জমা দিলে, তারা সেই টাকা ভিকটিমের রেজিষ্ট্রেশনকৃত ওয়েবসাইটের একাউন্টে জমা দেখাতো।
এভাবে ইউটিউব সাবস্ক্রাইব এর মাঝে প্রতারক চক্র ইনভেস্টমেন্টের বিভিন্ন প্ল্যান ভিকটিমের সাথে শেয়ার করে। যেখানে তাদের বিভিন্ন প্লানের বর্ননা দেওয়া হয়, যেমন ৫০০০ টাকা ইনভেস্ট করলে ৭০০০ টাকা, ১০০০০ হাজার টাকা দিলে ১৪০০০ টাকা পাওয়া যাবে! এভাবে তাদের বড় বড় লোভনীয় ইনভেস্টমেন্ট প্লান-১, ২,৩,৪ ইত্যাদি থাকে। ভিকটিম যখন তাদের লোভনীয় অফারের ফাঁদে পা দিয়ে বড় বড় এমাউন্টের টাকা ইনভেস্ট করে, তখনই প্রতারক চক্র টাকা গুলি আটকে দেয়।
এরপরে তারা বিবিধ সমস্যার কথা বলে, যেমন আপনি ভুল এমাউন্ট ইনভেস্ট করেছেন, পুনরায় ইনভেস্ট করেন, আপনার টাকা ফ্রিজ হয়ে গেছে, আপনার পূর্বের টাকা বের করতে হলে, পুনরায় ডিপোজিট করুন ইত্যাদি। এই প্রক্রিয়ায় ছলচাতুরী করে দক্ষিনখান থানায় অভিযোগ দায়ের করা ভিকটিমের কাছ থেকে প্রায় ১০,২৯,৫৪২ (দশ লাখ উনত্রিশ হাজার পাঁচশত বিয়াল্লিশ টাকা) হাতিয়ে নেয় এই প্রতারক চক্র।
থানায় দায়ের কৃত মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তরিত হলে ঘটনার নেপথ্যের অপরাধীদের শনাক্ত করার জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যায় সিআইডির সাইবার মনিটরিং টিম।
প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে সাইবার ইন্টেলিজেন্স এন্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট শাখা এ সংক্রান্তে প্রাথমিক অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা পায় এবং পরবর্তীতে এই চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে।
এর মধ্যে মোসাদ্দেকুর রহমান হোনীড় কৌশলে বিকাশ এজেন্ট সিম নিজের কাছে রেখে চক্রের ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী প্রতারণার টাকা লেনদেন করে। মোঃ আনোয়ার হোসেন (৩৮) বিকাশের ডিএসও এবং এজেন্ট দোকানদারদের কাছ থেকে সীম সংগ্রহ করে মোসাদ্দেকুর রহমানকে দেয়। অপর গ্রেফতারকৃত আসামী শাহিন ইসলাম (৩১) একজন বিকাশের ডিএসও। সে অন্যান্য ডিএসওদের কাছ থেকে এজেন্ট সীম সংগ্রহ করে মোসাদ্দেকুরকে দেয় এবং মোসাদ্দেকুর প্রতারণার টাকা লেনদেনে সহায়তা করে। বর্ণিত ভিকটিম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারন মানুষ এদের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকালে আসামীদের কাছ থেকে ০৬ টি মোবাইল ফোন, ১০ টি সিম উদ্ধার করা হয়। ১০ টি সিমের মধ্যে বিভিন্ন দোকানের নামে ০৪ টি বিকাশ এজেন্ট সিম রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে দক্ষিণখান (ডিএমপি) থানায় গতো ০৪/০২/২০২৪ ইং তারিখে দায়ের করা একটি প্রতারণা মামলায় আদালতে সোপর্দ করে সি আই ডি পুলিশ।