ঢাকা | ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪ - ৯:৫৬ অপরাহ্ন

সাভারে গোলাপ বাগানে ছত্রাকের আক্রমণের শঙ্কায় কৃষকরা

  • আপডেট: Tuesday, February 13, 2024 - 5:38 pm

ইউসুফ আলী খান।।

ঢাকার অদূরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে কয়েকটি গ্রামে বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদন হচ্ছে গোলাপ। তাই এইসব গ্রামকে এখন মানুষ গোলাপ গ্রাম হিসাবেই চিনেন। ১লা ফালগুন বসন্ত কাল, ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং ২৬ মার্চ বিজয় দিবসকে ঘিরে সাভারের গোলাপ গ্রামে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন চাষীরা। গোলাপের বাম্পার ফলন হলেও অজানা ছত্রাকের আক্রমণের কারণে চাষীদের দিন কাটছে শঙ্কায়।

ফাল্গুনের শুরুতে বসন্তবরণ ও ভালবাসা দিবসের আগে ফুলের পচন রোগে গোলাপ গাছের ডাল, পাতা ও কুঁড়ি ঝরে পড়ছে। ফুল ফুটলেও ছত্রাকের আক্রমণে গোলাপ ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেসব ক্ষেতে গোলাপ ফুটেছে তার পরিমাণও কম। অতিমাত্রায় শীত, কুয়াশা ও অসময়ে বৃষ্টির কারণে গোলাপ ক্ষেতের এই সর্বনাশ ঘটেছে বলে দাবি চাষীদের। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এ বছর ২৩০ হেক্টর জমিতে গোলাপের চাষ হয়েছে। ১৯৯০ সালে মিরপুর থেকে এসে বিরুলিয়ায় প্রথম গোলাপের চাষ শুরু করেন সাদেকুল নামের এক ব্যক্তি। তার বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ দেখে স্থানীয়রাও উদ্বুদ্ধ হয়ে শুরু করেন গোলাপের চাষ। চাষিরা লাভবান হওয়ায় ইউনিয়নের মোইস্তাপাড়া, সামাইর, শ্যামপুর, সাদুল্লাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গোলাপ চাষ। এখানে মেরিন্ডা, হাজারি, লিংকন, পাপা মিলন, বধূয়া বা হলুদ ও সাদা গোলাপের চাষ হয়। তবে বাজারে চাহিদা বেশি লাল মেরিন্ডার। এ গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষেরই প্রধান জীবিকা এখন ফুল চাষ।

সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের গোলাপ গ্রামের ছোট কালিয়াকৈর, সামাইর, সাদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, আকরাইনসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গোলাপ বাগান। গতবছরের তুলনায় এ বছর গোলাপের উৎপাদন বেশি হয়েছে। তবে ছত্রাকের কারণে অধিকাংশ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গাছের পাতা, ডাল কিংবা কুঁড়ি পঁচে ঝরে যাচ্ছে। কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেও মিলছে না কোন সমাধান। অনেক গাছের শাখা-প্রশাখা লালচে হয়ে আবার কালো হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও গাছের পুরো অংশই কালো হয়ে গেছে। কলি আসলেও ফুল না ফুটেই ঝরে যাচ্ছে।

কৃষকদের দাবি, কৃষি কর্মকর্তাদের জানিয়েও কিংবা তাদের দেওয়া পরামর্শে প্রতিকার মিলছে না। অধিকাংশ কৃষকের অভিযোগ, কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে এসে কোনো পরামর্শ দেন না।

এসময় কৃষকদের সাথে কথা হলে তারা জানানা, এ বছর গোলাপ গাছে পঁচা রোগ লেগেছে। গাছের পাতা, ডাল, কুঁড়ি পঁচে যাচ্ছে। বিভিন্ন রকমের ওষুধ দিয়েও আশানুরূপ কাজ হচ্ছে না। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এখানে পরিদর্শন করেন। তবে তারা কোনো পরামর্শ কিংবা কোনো কিছুই বলেন না। এখানে এসে তারা মরা ফুল, পাতা নিয়ে চলে যান।

এসময় তারা আরও জানান, গত কয়েক দিন ধরেই বেচা-বিক্রি বেশি। তবে যতটুকু আমরা আশা করেছিলাম ততটুকু ফুল বিক্রি করতে পারছি না। গত কয়েক দিন আগেই প্রতিদিন ২০০ থে‌কে ৩০০টি ফুল তোলা গেছে। কিন্ত বর্তমানে ৫০টা পাওয়া যায় না। ছত্রাকের কারণে কুঁড়ি থেকে ফুল ফোটার আগেই সব পঁচে গেছে। এতে চাহিদা থাকলে বিক্রি করা যাচ্ছে না। এখন আমাদের মাঝে সঙ্কা কাজ করছে।

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. ইশরাত জাহান জানান, সাভার উপজেলায় এবার ২৩০ হেক্টর জমিতে গোলাপের চাষ হয়েছে। এ বছর প্রায় ৪০কোটি ফুল বিক্রি হবে বলে লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। চাষীরা লাভবান হবে। গোলাপে ছত্রাকের আক্রমণ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করছি। চাষীদের সঙ্গে উঠান বৈঠক, ফুল বাগানের পাশে ফেস্টুনসহ নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়া ছত্রাকের আক্রমণ ঘটলে কী ওষুধ প্রয়োগ করা হবে তার ব্যবস্থাপত্রও কৃষকদের দেওয়া হয়।

সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, গোলাপ গ্রাম, সাভারে একটি পরিচিত এলাকা। এটা একটা বিখ্যাত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সাভারে। এখানে কোনো কৃষক যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেক্ষেত্রে আমরা সরকারকে অবশ্যই অবগত করলে আমরা সরকার থেকে সহযোগিতা পেতে পারি। আর উৎপাদন যদি ছত্রাক এর কারণে ফল করে তাহলে আমাদের কৃষি কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানাবো যাতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।