ঢাকা | নভেম্বর ৫, ২০২৪ - ৬:৪৭ পূর্বাহ্ন

রেমিট্যান্স প্রবাহ গড়ে বেড়েছে সামান্য

  • আপডেট: Saturday, December 23, 2023 - 12:10 pm

মো:খায়রুল আলম খান:
রেমিট্যান্স প্রবাহ গড়ে সামান্য বেড়েছে। তবে প্রবাসীদের এই রেমিট্যান্স আহরণের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে প্রধান পাঁচটি দেশ থেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলে এর প্রবাহ কমে গেছে। তবে বাকি পাঁচটি দেশ থেকে বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। সেখানে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর- এই ৫ মাসে গত বছরের তুলনায় সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, কাতার ও বাহরাইন থেকে গড়ে রেমিট্যান্স কমেছে ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, ইতালি, মালয়েশিয়া এবং ওমান থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে গড়ে ৩০ দশমিক ৮০ শতাংশ। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে দশমিক ২৪ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে ওইসব দেশ থেকে কমে যাওয়া উদ্বেগের কারণ। কারণ রেমিট্যান্স আসার শীর্ষ দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী কর্মরত। ওইসব দেশ থেকে রেমিট্যান্স কমে গেলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। শীর্ষ দেশগুলো থেকে কেন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমছে এর কারণ অনুসন্ধান করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কেননা, বিদ্যমান ডলার সংকট মোকাবিলার একমাত্র উপায় হচ্ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো। এটি কমে গেলে সার্বিক অর্থনীতিতে চাপ আরও বাড়বে। ফলে মন্দার ধকল কাটিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আরও বেশি সময় লাগবে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে হুন্ডি বন্ধ করে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বিদেশে ব্যাংক কর্মকর্তারা সফরে যাবেন। তারা রেমিট্যান্স বাড়ানোর ব্যাপারে সরেজমিন দেখে এসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। প্রবাসীদের ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারের বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে ব্যাংকগুলো বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে। গড়ে সরকারি ও ব্যাংক মিলে ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কমানো হচ্ছে। হুন্ডি নিরুৎসাহিত করতে আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি দেশে প্রবাসী ও তাদের আত্মীয় স্বজনদের সচেতন করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ দেশ ছিল সৌদি আরব। এখান থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬০ কোটি ২৮ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ১২৬ কোটি ০১ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স কমেছে ৩৪ কোটি ২৭ লাখ ডলার বা ২১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমায় এবার শীর্ষ অবস্থান থেকে নেমে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। গত অর্থবছরের ওই সময়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময়ে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কমে এসেছে ৯১ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে কমেছে ৬২ কোটি ৩৫ লাখ ডলার বা ৪০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স কমেছে দেশটি থেকে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র রেমিট্যান্স আহরণের ক্ষেত্রে চতুর্থ অবস্থানে নেমে এসেছে।
গত অর্থবছরের একই সময়ে তৃতীয় অবস্থানে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। ওই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১১৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলার।

চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে এসেছে ১৫৩ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে বেড়েছে ৩৯ কোটি ১৯ লাখ ডলার বা ৩৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। ফলে দেশটি রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ অবস্থানে চলে এসেছে। এর আগে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ ব্যাপকভাবে কমে যায়। এতে কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল দেশটি সফর করে রেমিট্যান্স কমার কিছু কারণ শনাক্ত করে। এসব সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নিলে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ আবার বাড়তে শুরু করেছে।

গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে রেমিট্যান্স আহরণের চতুর্থ অবস্থানে ছিল যুক্তরাজ্য। ওই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৭৬ কোটি ০৩ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে এসেছে ১০৮ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। ওই সময়ে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩২ কোটি ৯২ লাখ ডলার বা ৪৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। ফলে দেশটি তৃতীয় অবস্থানে ওঠে এসেছে।

কুয়েত থেকে গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৬৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। যা ছিল পঞ্চম অবস্থানে। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ৫৯ কোটি ২৮ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে কমেছে ৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার বা ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ফলে দেশটি এক ধাপ নিচে ষষ্ঠ অবস্থানে নেমে আসে।

রেমিট্যান্স আহরণে ষষ্ঠ ছিল কাতার। গত অর্থবছরে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৬১ কোটি ২০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ৪৪ কোটি ৩২ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে কাতার থেকে কমেছে ১৭ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ২৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ফলে দেশটি অষ্টম স্থানে নেমে এসেছে।

ইতালি থেকে গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৫১ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। রেমিট্যান্স আসার শীর্ষ তালিকায় দেশটি ছিল সপ্তম স্থানে। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ৬৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার বা ২ দশমিক ৫১ শতাংশ। ফলে দেশটি পঞ্চম স্থানে ওঠে এসেছে।

মালয়েশিয়ার অবস্থান ছিল অষ্টম স্থানে। দেশটি থেকে গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪৬ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ৫৩ কোটি ০৮ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে ওই দেশ থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬ কোটি ৬১ লাখ ডলার বা ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ। দেশটি এখন সপ্তম স্থানে ওঠে এসেছে।
রেমিট্যান্স আহরণে ওমানের অবস্থান গত অর্থবছরের মতো এবার নবম স্থানে রয়েছে। তবে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা ৩৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত অর্থবছরের ওই সময়ে এসেছিল ২৬ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ৩৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার।

আগের মতো বাহরাইনও দশম স্থানে রয়েছে। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স কমেছে ৫৩ লাখ ডলার বা ২ দশমিক ৬২ শতাংশ। গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০ কোটি ২০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ১৯ কোটি ৬৭ লাখ ডলার।

এর বাইরে অন্যান্য দেশ থেকে রেমিট্যান্স কম পরিমাণে এলেও তা বাড়ছে। গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ৮৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। যা আগের ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ৮৮১ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। যা গত অর্থবছরের তুলনায় দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।