ঢাকা | অক্টোবর ১৬, ২০২৪ - ৩:৫০ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নভেম্বরে জাতিসংঘে আলোচনা

  • আপডেট: Thursday, July 20, 2023 - 1:26 pm

মোঃ খায়রুল আলম খানঃ সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে বেশ আলোচনা তৈরি করেছে। যদিও বাংলাদেশ সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বলছে, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে না। বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই অভিযোগ তোলা হচ্ছে।

মানবাধিকারের প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকার “জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউয়ে (ইউপিআর)” তিন দফা নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। আগামী নভেম্বরে জেনেভায় ইউপিআরের অধিবেশনে আরেক দফা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রশ্নের জবাব দেবে বাংলাদেশ।

আগামী ৭ আগস্টের মধ্যে ইউপিআরে বাংলাদেশের মানবাধিকার রিপোর্ট জমা দেবে সরকার এবং সেটির ওপরে নভেম্বরে জেনেভায় আলোচনা হবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের গণতন্ত্রসহ অন্যান্য অধিকারের বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর আগ্রহ বেশি থাকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “ইউপিআরে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, এজেন্সি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। সবার মতামতের ভিত্তিতে সরকার ৭ আগস্টের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে।”

জাতিসংঘে প্রথম ইউপিআর পর্ব শুরু হয় ২০০৯ সালে। ওই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে সরকার। এরপর ২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল দ্বিতীয় পর্ব এবং ২০১৮ সালের ১৪ মে তৃতীয় পর্বে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়। প্রথম দুই পর্বে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচনায় অংশ নিলেও তৃতীয় পর্বে আইনমন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

ইউপিআরের আলোচনায় বাংলাদেশের যেসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দেশ বারবার সুপারিশ করেছে, সেগুলো হলো- মানুষের জীবন ও নিরাপত্তার অধিকার, মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালীকরণ, জাতিসংঘ মানবাধিকার ব্যবস্থার সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি, নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতন প্রতিরোধ ও প্রতিকার এবং শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত ইউপিআরের প্রথম পর্বে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাষ্ট্র বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য মোট ৪২ সুপারিশ করে। এরমধ্যে বাংলাদেশ দুটি সুপারিশ গ্রহণ করেনি। ওই দুটি সুপারিশ ছিল- মৃত্যুদণ্ড বাতিল এবং সমকামিতা সংক্রান্ত।

২০১৩ সালে দ্বিতীয় পর্বে ১৯৬টি সুপারিশের মধ্যে ৫টি সুপারিশ গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ। ওই ৫টি সুপারিশের সবগুলো ছিল মৃত্যুদণ্ড বাতিল ও সমকামিতা সংক্রান্ত।

এই পর্বে বাংলাদেশ গ্রহণ করেছিল এমন সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, “গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের যেকোনো অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করতে হবে।”

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় পর্বে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নতির জন্য মোট ২৫১টি সুপারিশ করা হলেও এরমধ্যে ৭৩টি সুপারিশ বাংলাদেশ গ্রহণ করেনি।

মানবাধিকার নিয়ে জাতিসংঘে যত ধরনের মেকানিজম রয়েছে, তারমধ্যে সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী হচ্ছে ইউপিআর। একইসঙ্গে এটি সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মও। বলা যায়, ইপিআর হচ্ছে আসলে অত্যন্ত সুক্ষ্ম একটি রাজনৈতিক অস্ত্র।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর মো. শহীদুল হক বলেন, “ইউপিআর একটি রাজনৈতিক বিষয়। এখানে কোনো একটি দেশ অন্য একটি দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক অধিকারগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও নিজস্ব মতাদর্শের দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করে থাকে। তবে কিছু দেশ এটিকে ‘ভূ-রাজনৈতিক অস্ত্র’ হিসেবেও ব্যবহার করে থাকে। ফলে এটি একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া।”

শহীদুল হক আরো বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়ন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি সব সময় একটি টেস্ট কেস হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এ কারণে আগেও বাংলাদেশ নিয়ে অন্যদের আগ্রহ ছিল এবং এখনো থাকবে।”

শহীদুল হক বলেন, “এখানে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে- সবাইকে বোঝানো যে, দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের যে রাস্তা সেটি ঠিক আছে এবং সেই পথেই দেশের অগ্রগতি হচ্ছে। বিষয়টি অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। এখানে কূটনীতি একটি বড় ভূমিকা পালন করে।”