ঢাকা | ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪ - ১১:০৪ অপরাহ্ন

তাইওয়ানের ‘গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়’ হামলার মহড়া চালাচ্ছে চীন

  • আপডেট: Monday, April 10, 2023 - 6:24 pm

মো: খায়রুল আলম খান: চীন গত দুইদিনে তাইওয়ানের ভূখণ্ডে এবং তার আশেপাশের জলসীমায় গুরুত্বপূর্ণ সব টার্গেটে নিখুঁত হামলার মহড়া চালিয়েছে।
তাইওয়ানকে ঘিরে বেইজিং তিনদিন ধরে একটি সামরিক মহড়ার যে ঘোষণা দিয়েছে আজ সোমবার তার শেষ দিন।
চীন তার এই মহড়াকে স্বশাসিত এই দ্বীপটির প্রতি কঠিন হুঁশিয়ারি বলে জানিয়েছে। গত সপ্তাহে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্র সফরের কারনেই চীন এই মহড়া চালাচ্ছে।

চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে এই মহড়ায় সামরিক বাহিনীর দূর-পাল্লার রকেট, নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার, ক্ষেপণাস্ত্র-বাহী জাহাজ, বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান, বোমারু বিমান, জ্যামারসহ আরো অনেক অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে।

চীনের সামরিক বাহিনী যখন তাইওয়ানকে ঘিরে ফেলার মহড়া পরিচালনা করছে সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বেইজিং-এর প্রতি শান্ত থেকে সংযম প্রদর্শনের জন্য আহবান জানানো হয়েছে।

তাইপে বলছে শনিবার কমকরে ৭১টি চীনা যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের চারপাশ দিয়ে উড়ে গেছে।
তাইপে আরো জানিয়েছে চীনের ৪৫টি সামরিক বিমান তাইওয়ান প্রণালীর মধ্যরেখা অতিক্রম করেছে, এই মধ্যরেখাটি তাইওয়ান ও চীনা ভূখণ্ডের সীমারেখা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।অন্যথায় যুদ্ধ বিমানগুলি তাইওয়ানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বিমান প্রতিরক্ষা জোনের দিকে উড়ে গেছে।

এছাড়াও মহড়ায় চীনের নয়টি যুদ্ধজাহাজও অংশ নিয়েছে, বেইজিং এই মহড়ার নাম দিয়েছে “জয়েন্ট সোর্ড” যা চলবে আজ সোমবার পর্যন্ত।
চীনের একটি যুদ্ধজাহাজ মহড়ার প্রথম দিন পিংটন দ্বীপের কাছে অবস্থান নিয়ে সেখান থেকে গোলা বর্ষন করেছে। বেইজিংয়ের এই দ্বীপটি তাইওয়ানের সবথেকে কাছের জলসীমা।

তাইওয়ানের উপকূল রক্ষী বাহিনীকে পরিচালনা করে ওশান অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল, এরা একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে দেখা যায় তাদের একটি জাহাজ চীনা যুদ্ধজাহাজের পেছনে যাচ্ছে, তবে তা কোথায় হয়েছে ভিডিওতে তা বলা হয়নি।

একি ভিডিও ফুটেজে একজন নাবিককে চীনা যুদ্ধজাহাজকে উদ্দেশে করে রেডিওতে বলতে শোনা যায়: “আপনারা আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতি ও নিরাপত্তায় বড় ধরনের ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করছেন। দয়া করে এখনই এখান থেকে চলে যান। আপনারা এরপরেও যদি আরো অগ্রসর হতে চেষ্টা করেন, তাহলে আপনাদের এখান থেকে বিতাড়িত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”
ভিন্ন আরেকটি ফুটেজে দেখা যায় তাইওয়ানের একটি যুদ্ধজাহাজ দি হুয়া কোস্ট গার্ডের একটি জাহাজের পাশেপাশেই চলছে। তাইওয়ানের কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তারা এই ঘটনাকে চীনা নৌযানের সাথে “অচলাবস্থা” বলে জানিয়েছেন।
প্রথম দিনের মহড়া শেষ হয় শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন রবিবার সকাল থেকে চীনা যুদ্ধবিমানের মহড়া পুনরায় শুরু হয়।

বেইজিংয়ের এই সামরিক তৎপরতায় তাইওয়ানের কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
শনিবার তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে বলেন তাদের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের যুক্তরাষ্ট্র সফরকে এবারের “সামরিক মহড়ার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যার ফলে এই অঞ্চলের শান্তি, স্থিতি এবং নিরাপত্তার ব্যাপারে ব্যাপক উদ্বেগ ও আশংকা তৈরি হয়েছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা চীনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তারা যেন এই মহড়ার কারণ হিসেবে প্রেসিডেন্ট সাই-এর যুক্তরাষ্ট্র সফরকে ব্যবহার না করে। এছাড়া তারা আরো বলেন “স্থিতাবস্থার পরিবর্তন না ঘটানো এবং সংযম প্রদর্শনেরও” আহবান জানান।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন “চীন কী কী করছে তার ওপর ঘনিষ্ঠভাবে নজরদারি রাখা হচ্ছে,” এছাড়াও “ওই অঞ্চলে শান্তি, স্থিতি বজায় রাখাসহ জাতীয় নিরাপত্তার অঙ্গীকার রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের যথেষ্ট উপকরণ এবং সক্ষমতা রয়েছে।” মুলত যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭৯ সালে বেইজিং-এর স্বার্থে তাইওয়ানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। তবে আইন অনুসারে তারা তাইওয়ানকে রক্ষার ব্যাপারে সাহায্য দিতে বাধ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবারই বলেছেন চীন যদি তাইওয়ানকে আক্রমণ করে বসে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাতে হস্তক্ষেপ করবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই বার্তা খুব বেশি স্পষ্টও নয়।
তাইপের প্রতি “অব্যাহত সমর্থনের” জন্য প্রেসিডেন্ট সাই বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে হাউজ স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির সাথে সাক্ষাতের সময় তাকে ধন্যবাদ জানান। এসময় তিনি বলেন, “এর ফলে তাইওয়ানের জনগণ যে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েনি এবং আমরা যে একা নই এবিষয়ে জনগণ পুনরায় আশ্বস্ত রয়েছে।” তাইওয়ান নিজেদেরকে একটি সার্বভৌম দেশ বলে মনে করে। তাদের রয়েছে নিজস্ব সংবিধান ও নির্বাচিত সরকার প্রতিনিধি।

প্রায়শই চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও একত্রীকরণের কথা বলে থাকেন। চীন মনে করে তাইওয়ান তাদের একটি বিচ্ছিন্ন প্রাদেশিক অঞ্চল মাত্র, এবং একসময় এটি বেইজিং এর নিয়ন্ত্রণে আসবে, এজন্যে প্রয়োজনে তারা শক্তি প্রয়োগ করতেও প্রস্তুত এবং তাতে তারা পিছপা হবেনা।