ঢাকা | ডিসেম্বর ৩, ২০২৪ - ১০:৫৮ অপরাহ্ন

শিরোনাম

খাগড়াছড়ি এমপি’র জামাই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অপু দুর্নীতির বরপুত্র

  • আপডেট: Sunday, September 17, 2023 - 5:10 am
খাগড়াছড়ি থেকে ফিরে কামাল পারভেজ : টিআইবি জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে বছরে একবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেন দূর্নীতিতে কোন দেশ চ্যাম্পিয়ান এবং কততম তালিকায় আছে দূর্নীতির বরপুত্র হিসেবে। বাংলাদেশও কয়েকবার দূর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে বলে টিআইবি’র প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়। টিআইবি যদি বাংলাদেশর সব জেলা পরিষদ নিয়ে দূর্নীতি  প্রতিবেদন প্রকাশ করে তাহলে দেখা যাবে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ ও দায়িত্বরত চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু চ্যাম্পিয়ান হিসেবে সনদ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। অবশ্য এই চ্যাম্পিয়ান বানানোর পিছনে যার আর্শীবাদপুষ্ট রয়েছে সে হলেন খাগড়াছড়ি জেলার স্হানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা। কখনো আওয়ামী লীগ সমর্থক না হয়েও হয়েছেন জেলা পরিষদ সদস্য, পরে আওয়ামী লীগ খাতায় নাম লিখে এক লাফে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম- সম্পাদক পদে আদিষ্ট হন। কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা দ্বিতীয়বারে সংসদ হলে মংসুইপ্রু চৌধুরী অপুকে জেলা পরিষদ সদস্য থেকে চেয়ারম্যান পদে বসানোর জন্য কারুকলাম করে ভাতিজী জামাইকে জামাই আদরে চেয়ারে বসিয়ে দেন। কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা ও মংসুইপ্রু চৌধুরী অপুর সম্পর্কটা হলো শশুর জামাই।

স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি’র বড় ভাইয়ের মেয়ের জামাই মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু। সে সুবাধে হয়েছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। জেলা পরিষদ সদস্য থাকাকালীন মংসুইপ্রু চৌধুরী অপুর বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) – মামলা করেন। তৎকালীন দুদকের মামলা গোপন রেখে শশুর কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা জেলা আওয়ামী লীগ সিনিয়র নেতাদের তোয়াক্কা না করে ভাতিজি জামাই মংসুইপ্রু চৌধুরী অপুকে পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করেন। চাচা শশুর কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরার আর্শীবাদে তিনি এখন অত্র জেলায় দুর্নীতির বরপুত্র হিসেবে সবার নিকট পরিচিত লাভ করেছে।
আত্মীয়করণ : কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা এমপি হলেও তিনি আবার টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদ মর্যাদা) ক্ষমতা অপব্যবহার করে জেলা পরিষদকে বানিয়েছেন আত্নীয়করণ। এদিকে ভাতিজি জামাইকে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়ে কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা এমপি তাঁর আপন ভাগিনা খোকনেশর ত্রিপুরাকে জেলা পরিষদ সদস্য করে এবং জেলা আওয়ামী লীগ কমিটির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য হিসেবে পদে অসীন করা হয়। জেলা পরিষদ খোকনশর ত্রিপুরার বিরুদ্ধে রয়েছে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে এবং  বেশ কিছুদিন আগে এক কলেজ ছাত্রীর সাথে অবৈধভাবে শারীরিক সম্পর্কের সময় স্হানীয় উপজাতি যুবকদের হাতে নাতে ধরা পড়ে এবং ভিডিওট ভাইরাল হলেও এখনো সে বহাল তবিয়তে সদস্য পদে আছেন। এখানেই শেষ নয়, জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে খাগড়াছড়ি অনেক দপ্তরে কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরার আত্মীয়স্বজনে ভরপুর হয়ে আছে। বর্তমানে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদকে বলা হয় আত্নীয় পরিষদ।
অপুর দুর্নীতির হিসাব নিকাশ ও সম্পদ:
ক্ষমতার অপব্যবহারে পুরো জেলা পরিষদকে অনিয়ম আর অর্থ লোপাটের খারখানায় পরিণত করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জেলা পরিষদে বরাদ্ধ কোটি কোটি টাকর খাদ্যশস্য লোপট, সরকারি জমি দখল, টেন্ডারবাজি, অর্থের বিনিময়ে প্রাথমিক শিক্ষা সহ জেলা পরিষদের হস্তান্তরিত বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে বাড়ি-গাড়িসহ সম্পদের পাহাড় বানিয়েছে। দেশ ছাড়িয়ে বার্মার ইয়াংগুনে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ ও ভারতের কলকাতায় একটি ফ্ল্যাট বাড়িও কিনেছেন।
শুধু জেলা পরিষদ নয়, জবাবদিহিতা না থাকায় এমপি’র আর্শিবাদপুষ্ট মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু জেলার সকল উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে থাবা বানিয়েছেন। তার ক্ষমতার দাপটে তটস্থ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। এম.পি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার বড় ভাইয়ের জামাই হওয়ার সুবাধে মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ গঠিত একই পরিষদের সদস্য ছিলেন তিনি। ফলে আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মেরন পথ আরো প্রশস্ত হয় তার। জেলা পরিষদের হস্তান্তরিত প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিভাগ, কৃষি বিভাগের নিয়োগ বাণিজ্যসহ তার দুর্নীতি ও অনিয়মের পরিধি নিজের প্রতিষ্ঠানের গন্ডি পেরিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি ও সড়ক বিভাগের প্রতিষ্ঠানের কব্জায় নিয়ে নেয়। মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র সরবরাহ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, বিভিন্ন অফিসের রিপেয়ারিং ও পরষদের অনুকূলে বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকার খাদ্যশস্য আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু’র দুর্নীতির চিত্র: জানা গেছে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও দুদকসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে পাঠানো অভিযোগপত্রে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু’র বিভিন্ন অনিময় ও দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠে। অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দখলবাজি ও পদ বাণিজ্যের বাইরে প্রাথমিক শিক্ষার মতো স্পর্শকাতর ও বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে প্রতিবারই দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের হস্তান্তরিত প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের ১৯৩ জন সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে ১৫-২০ লক্ষ টাকা হারে ঘুষ গ্রহণ করে চাকুরি দিয়েছেন। এক্ষেত্রে পরীক্ষার আগের রাতে জেলা পরিষদেও নিজের অনুগত কর্মকর্তাকে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কওে পরীক্ষার্থীদের হাতে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়। এছাড়া জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত স্বাস্থ্য বিভাগ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও হার্টিকালচার সেন্টারে জনবল নিয়োগে ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বও ১১০ জন কর্মচারী নিয়োগ দেন। তাদের কাছ থেকেও প্রতিটি পদ-পদবী অনুসারে ৫-১৫ লাখ টাকা করে উৎকোচ নেয়া হয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, বিগত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে তৎকালীন জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলে নিয়োগ পক্রিয়া আটকে যায়।
আরও অভিযোগ রয়েছে, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগী হয়েও টেন্ডারবাজি করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তিনি সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার জন্য উপজাতীয় লাইসেন্স ব্যবহার করেন। যেমন নিজের নামের লাইসেন্স মেসার্স মং কনষ্ট্রাকশন, মেসার্স রিপ এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স এস. অনন্ত ত্রিপুরা বিকাশ ত্রিপুরার লাইসেন্স। মূলত: এই তিন লাইসেন্সের বিপরীতে খাগড়াছড়িতে সকল টেন্ডার বাণিজ্য হয়ে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, এ সব লাইসেন্স দিয়ে কোন কোন কাজ না করে আবার কোন কাজ অর্ধেক করে কখনো কখনো একই কাজ দুইবার টেন্ডার দেখিয়ে বিল উত্তোলণের নজির রয়েছে। যা তদন্ত হলে বেরিয়ে আসছে। আর জেলা পরিষদের উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি বৈধতা নিশ্চিত নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পরিষদে বসিয়েছেন খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রবীণ চন্দ্র চাকমার জামাই তৃপ্তি শংকর চাকমাকে।
অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু ক্ষমতার অবব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন এবং কাজ না করে বিল উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এক কোটি দশ লাখ টাকায় গুইমারা উপজেলাধীন জালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ ( টেন্ডার আইডি- ৫৪০৭২৯), এক কোটি ৫৩ লাখ টাকায় গুইমারা উপজেলার যৌথ খামার সওজ রাস্তা হতে দেওয়ান পাড়া রাস্তা নির্মাণ (গ্রুপ-১, টেন্ডার আইডি নং ৫৪২৪২৮), এক কোটি ৫৩ লাখ টাকায় গুইমারা উপজেলায় সওজ রাস্তা হতে দেওয়ান পাড়া রাস্তা (গ্রæপ-৩, টেন্ডার আইডি নং- ৫৪২৫৪৪), এক কোটি ৫৩ লাখ টাকার গুইমারা উপজেলার যৌথ খামার সওজ হতে দেওয়ানপাড়া পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ (গ্রুপ-২, টেন্ডার আইডি নং- ৫৪৫৭১৬, ৮ কোটি টাকার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিপ্তরের মহালছড়ি উপজেলার মেশিনপাড়া হতে খাগড়াছড়ি হেডকোয়ার্টার পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন (টেন্ডার আইডি নং- ৫৩৭৮৭৫), এক কোটি ৯৭ লাখ টাকায় রামগড়  উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের গুজাপাড়া হতে নয়াপাড়া রাস্তা নির্মাণ (গ্রুপ-১ টেন্ডার আইডি-৫৪২৫৪৭), এক কোটি ৯৭ লাখ টাকায় রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের গুজাপাড়া হতে নয়াপাড়া পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ (গ্রুপ-৩, টেন্ডার আইডি- ৫৪৫৭০৮), সাত কোটি ২০ লাখ টাকায় শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে রামগড় সহকারি কলেজে গার্লস হোস্টেল নির্মাণ (আইডি-৩১৮১৩৩), ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকায় মহালছড়ি উপজেলার ৬নং এপিবিএন-এর ভবন নির্মাণ (আইডি নং-৩৯৭৩৪৫)।
এছাড়া দীঘিনালা উপজেলায় পিআইসি’র মাধ্যমে মায়াহাপাড়া সহকারি প্রাথমিক মাঠ উপযুক্ত করার জন্য ২০ লাখ বরাদ্ধ দেওয়া হলেও কোন কাজ না করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। গত ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে কোন টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে কোটেশনের মাধ্যমে কাজ ভাগভাটোয়ারা সহকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য বরাদ্ধকৃত সাড়ে ১৪ কোটি টাকার মূল্যের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য কোন প্রকল্প কিংবা দূর্গোগ কাউকে না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়। বাজার ফান্ডের বিভিন্ন বাজার সেটের নামে সিডিউল ছাড়া কোটেশনের করে ৩৪টি বাজার সেট সংস্কার প্রতিটি ৫ লাখ টাকা করে প্রায় এক কোটি সত্তর লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বিভিন্ন দপ্তর ও পুরাতন কাজ সংস্কারের জন্য সহকারি ৩ কোটি টাকার মেন্টেনেন্স কাজে বিল ঠিকাদার মেসার্স রিপ এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে কোন কাজ না করে উত্তোলন করা হয়। যার আইডি নং- ৪৪৭২৮৮ ও ৪৬০৫৬৪। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের রামগড়ের সোনাইপুল ও মানিকছড়ির গাড়িটানা টোল কেন্দ্র দুই কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকা নির্ধারণ হলেও সহকারী জেলা পরিষদের কোষাগারে নামমাত্র জমা দিয়ে বাকী টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু’র টেন্ডারবাজির অন্যতম অস্ত্র গুপসি টেন্ডার বাজারে আসে না এমন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে নাম মাত্র কাজ করে আবার কখনো কখনো কাজ না বিল উত্তোলন।
মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু জেলা পরিষদের সদস্য থাকাবস্থায় দুর্নীতিতে পাকাপোক্ত। ঐ সময় তিনি প্রত্যেক বছর পিআইসি’র মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা তুলে নিতেন। বিশেষ করে জামানতের ১০ ভাগ অর্থ কোন কাজ না করেই উত্তোলন করেছেন। প্রতি বছর ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বাস ভবন মেরামতের নামে ২০ লাখ টাকা, পরিষদের সার্কিট হাউজ মেরামতের নামে ৪০ লাখ টাকা ও রেস্ট হাউজ মেরামতের নামে ৪০ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। তিনি একজন মাদকসেবীও।
মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু’র নামে যত মামলা:
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু’র নামে অন্তত: হত্যা ও দুর্নীতিসহ চারটি মামলা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- জোড়া খুন, অগ্রণী ব্যাংকের চেক জালিয়াতির অভিযোগে ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশন, রাঙামাটি সমন্বিত কার্যালয়। ধারা ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ পেনাল কোড, খাগড়াছড়ি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রইছ উদ্দিনকে প্রাণ নাশের চেষ্টার অভিযোগে খাগড়াছড়ি সদর থানায় ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর, ধারা ১৪৩/৩২৩/৪২৫/৩০৭/৪২৭/১০৯/৫০৬ পেনাল কোড এবং খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের কেন্ডিলিবারের ছাদ ধসে দুই শ্রমিক নিহত ও ৫ শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় ফৌজদারী কার্যবিধি ১৫৬(৩) ধারায় মামলা।
মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু’র যত সম্পদ:
জানা গেছে, এক সময় মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু’র আর্থিক অবস্থা খুবই করুন। থাকা-খাওয়ার পরিবেশ ছিল না। খাগড়াছড়ি শহরের পানখাইয়া পাড়া এলাকায় ঘুরতে। এখন সে শূন্য থেকে কোটিপতি। জেলা পরিষদের সদস্য ও পরবর্তিতে চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাধে তিনি বাড়ি-গাড়ী ও ভূ-সম্পত্তিসহ হাজার কোটি টাকার মালিক। অনুসন্ধানে দেখা গেছে মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু’র খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনোনীত হওয়ার কয়েক মাসের মাথায় খাগড়াছড়ি শহরের পানখাইয়া পাড়া এলাকায় প্রায় কোটি টাকা ব্যয় করে বিলা সবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছ। পুরো জেলায় তার ইটভাটা রয়েছে ৯টি। তার মধ্যে খাগড়াছড়ি সদরের পানখাইয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নিচে একটি, সিন্দুকছড়িতে একটি, রামগড়ের পাতাছড়ায় দুটি, মাটিরাঙায় একটি, লক্ষীছড়িতে দুটি বাড়ি রয়েছে। পানছড়ির কাঠালমনি এলাকায় ১২শ ৫০ কানি আম বাগান, ভাইবোনছড়ায় শেয়ারের শত কানি জায়গা কিনে মায়াবিনি লেক স্থাপন, খাগড়াছড়ি সদরের বটতলী এলাকায় এক কোটি ৪০ লক্ষ টাকায় পরেশ চাকমার কাছে থেকে ৭ কানি জমি ক্রয়, সিন্দুকছড়িতে ৫শত কানি জায়গা ক্রয়, গুইমারায় সাথেয়াই চৌধুরীর মাধ্যমে ২০ জানি ধানি জমি ও ৬শত জানি পাহাড় ক্রয়, দীঘিনালা উপজেলার জামতলী এলাকায় ৮০ একর ২শত কানি জমি ক্রয়, খাগড়াছড়ির মাইসছড়ি স্কুলের পূর্বপার্শ্বে ১০ শত জায়গা ক্রয়। ৭টি হাইস ও নোহা গাড়ী রয়েছে মংসুইপ্রæ চৌধুরী অপু’র। যা ভাড়ায় চলছে। তার ব্যবসার কাজের জন্য ৫টি ট্রাক, ইটভাটার কাজে ব্যবহারের জন্য ১৫টি ট্রাক্টর, ২টি ডোজার, সাজেকসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে চলাচলের জন্য তিনটি পিকআপ ও স্ত্রীর ব্যবহারের জন্য একটি প্রাইভেট কার। এছাড়াও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মংসাথোয়াই মারমার ভাইয়ের মাধ্যমে বার্মার ইয়াগুনে বিলাস বহুল বাড়ি নির্মাণ ও ভারতের কলিকাতায় একটি ফ্ল্যাট বাড়ি কিনেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে  মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু’র সাথে তার মুঠোফোনে যোগযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় দিতেই ওপাশ থেকে মোবাইল ফোনের লাইনটি কেটে দেওয়া হয় পড়ে চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।।