ঢাকা | ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪ - ৪:২১ পূর্বাহ্ন

কারাগারে আয়ানাবাজির কোন সুযোগ নেই: আইজি প্রিজন

  • আপডেট: Tuesday, January 30, 2024 - 2:27 pm

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ 

কারা মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক বলেছেন, কারাগার নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে। যেমন আয়নাবাজি সিনেমার মতো একজনের সাজা অন্যজন খেটে দিতে পারে। বাস্তবে এসব ঘটনা ঘটানো এখন আর সম্ভব নয়। এনটিএমসির সঙ্গে সমন্বয় করে একটি ডেটাবেইজ তৈরি করা হয়েছে। একজন বন্দি যখন জেলখানায় প্রবেশ করে তখন তার ফিঙ্গার প্রিণ্ট, আইরিস ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে এন্ট্রি করা হয়। সুতরাং কেউ জালিয়াতির চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ে যাবে। শুধু এটিই নয়, কারাগারকে সত্যিকার অর্থে সংশোধনাগার করতে ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ’ স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, কারাগারের অনিয়ম বন্ধ করতে ৩৮টি কারাগারকে সিসি ক্যামেরার আওতায় অধিদপ্তর থেকে নজরদারি করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের ৬৮ কারাগারকেই সিসি ক্যামেরার আওতায় কেন্দ্রীয়ভাবে নজরদারি করা হবে। কারাবন্দিদের সেবা বাড়ানোর জন্য ৫ হাজার জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রাজশাহীতে নির্মাণ হয়েছে কারা প্রশিণ ইনস্টিটিউট। কারা প্রশিণ একাডেমি ও বিশেষায়িত কারা হাসপাতাল কেরানীগঞ্জে বানানো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি কারাগারে দুটি বড় বড় ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড রয়েছে। এতে করে বন্দি ও দর্শনার্থীরা দেখতে পারছেন- কার জামিন হলো এবং বিভিন্ন নির্দেশনা। এই ডিসপ্লেকে জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমও বলা যেতে পারে। ডান্ডাবেড়ি বিতর্ক নিয়ে কারা প্রধান বলেন, ডান্ডাবেড়ি পড়ানো কারা কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাতে হয়না।

 

আইজি প্রিজন আরও বলেন, কারাগারে কনডেম সেল বলতে কিছু নেই। যারা মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি তাদের কারাবিধি অনুযায়ী পৃথক রাখা হয়। তার মানে এই নয় যে, বাইরে থেকে যেমনটা সবাই মনে করে, কনডেম সেল মানে ভূতুরে জায়গা বা ভিন্নরকম কিছু। সংশ্লিষ্ট যারাই কনডেম সেল পরিদর্শনে যান তারাই বলেন, বাইরে থেকে কি ভাবতাম আর কি দেখছি। কনডেম সেলেও বিধি অনুযায়ী বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়। শুধু কনডেম সেল নয়, উন্নয়নের সোপানে এগিয়ে চলা বাংলাদেশে- কারাগার কোনো অংশে পিছিয়ে নেই।
মঙ্গলবার কারা অধিদপ্তরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) নবনির্বাচিত কমিটির সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

এসময় কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান, কারা উপ-মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া, সহকারি কারা মহাপরিদর্শক (আইন ও অর্থ) আব্দুল কুদ্দুছ, জেপুটি জেলার (স্টাফ অফিসার কারা মহাপরিদর্শক) মো. সাইদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ক্র্যাবের সভাপতি কামরুজ্জামান খান, সহ-সভাপতি শাহীন আবুদল বারী, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক হরলাল রায় সাগর, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম রাজী, দফতর সম্পাদক কামাল হোসেন তালুকদার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নিহাল হাসনাইন, প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক ইসমাঈল হুসাইন ইমু, আইন ও কল্যাণ সম্পাদক ওয়াসিম সিদ্দিকী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাহীন আলম, কার্যনির্বাহী সদস্য আলী আজম ও শেখ কালিমউল্যাহ উপস্থিত ছিলেন।
আনিসুল হক বলেন, কয়েদী বন্দি থেকে হাজতি বন্দি কয়েকগুণ বেশি। বর্তমানে কয়েদি বন্দি প্রায় বিশ হাজারের মত থাকে আর হাজতি থাকে ৫৫ থেকে ৬০ হাজারের মত। বন্দিদের খাদ্য তালিকায় বেশ পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ৩৮টি কারাগারে ৩৯টি বিষয়ে বন্দিদের প্রশিণ দেয়া হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে হস্ত শিল্প থেকে শুরু করে গার্মেন্টেসের কাজও শেখানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার বন্দিকে প্রশিণ দেয়া হয়েছে। ফলশ্রুতিকে এসব প্রশিনপ্রাপ্ত বন্দি যখন স্বাভাবিক জীবনে ফেরত যায়। তখন এই প্রশিণ থেকে কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। এছাড়াও ঝুঁকি ও সময় বিবেচনায় দেশের ৫টা কারাগারে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল আদালতের সংখ্যাও বাড়বে।